কাউখালী প্রতিনিধি: পিরোজপুরর কাউখালীতে ‘অনন্যা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ নামে একটি এনজিওর কর্মকর্তারা ২০০ গ্রাহকের সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। ভূক্তভোগিদের অভিযোগ ওই সংস্থাটির ম্যানেজার মামুন হাওলাদার সমিতিতে গ্রাহকদের জমাকৃত ২০ লাখ টাকা পকেটস্থ করে গত তিনদিন ধরে লাপাত্তা । বর্তমানে এনজিও কার্যালয়টি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার ভূক্তভোগি গ্রাহক জাহান আরা বেগম বাদি হয়ে ৫জনকে আসামী কাউখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ওই এনজিও অফিস ঘর মালিক আব্দুল জব্বার হোসেনকে গ্রেফতার করেছে।
স্থানীয়রা জানান, ‘অনন্যা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ ( রেজিষ্ট্রেন নম্বর- সকস- ০০২৯২/০০৬৭৯/২০০০/১৯৮৩ ) নামে কথিত এনজিওটি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাশরী সেতু সংলগ্ন আব্দুর জব্বারের বাড়ির পাকা ভবন ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাতো। এর আগে ওই এনজিওটি শহরের কলেজ পাড়া এলাকার এক পুলিশ সদস্যের বাড়িতে ভাড়ায় থেকে কার্যক্রম চালিয়েছে। এরপর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কয়েকশত সমিতি গঠন করে। এনজিওটি সহজ শর্তে ঋণ ও নানা আর্থিক সুবিধার দেওয়ার কথা বলে দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে পাস বইয়ের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা সঞ্চয় উত্তোলন করে ।
এনজিওটির কর্মকর্তা ২০০ জমাকৃত ২০ লাখ টাকা নিয়ে হাতিয়ে গত তিনদিন ধরে উধাও হয়ে যায়। রবিবার গ্রাহকরা ম্যানেজার পালিয়েছে খবর পেয়ে সংস্থাটির কার্যালয়ে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতারিত গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানে আশ্বস্ত করেন।
স্থানীয় ভুক্তভোগী গ্রাহক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ওই এনজিও থেকে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলতে গত শনিবার (২৭ জুন) জামানত (সঞ্চয়) হিসেবে ৫ হাজার ২৫০ টাকা দিয়েছি। সোমবার (২৯ জুন) আমাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিল। আমার সঙ্গে এ সময় ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ নিতে আরো ৯ জনের প্রত্যেকে ৫ হাজার ২৫০ টাকা করে জমা দেন। তিনি আরও বলেন, রবিবার সকালে অফিসের লোকজনকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া গেলে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। পরে এসে দেখি অফিসটি তালাবদ্ধ। পওে খবর পেয়ে আমার মতো প্রতারিত অনেক নারী-পুরুষ জড়ো হয়েছেন।
প্রাতারিত গ্রাহক মামুন মিয়া জানান, তিনি এক লাখ টাকা ঋণ নিতে ১১ হাজার টাকা সঞ্চয় হিসাবে জমা দিয়েছেন। দুইদিন আগেই টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তাদের টাকার বরাদ্দ আসেনি বলে ঘুরাচ্ছেন এনজিও কর্মীরা।
সংশ্লিষ্ট এনজিওটিকে অফিস হিসেবে ঘর ভাড়া দেয়া ভবন মালিক আব্দুল জব্বার হোসেন জানান, তার ঘরটি গত ৭/৮দিন আগে ওই এনজিওটির মামুন হাওলাদার নামে শাখা ম্যানেজার পরিচয়ে এক ব্যাক্তি এসে ভাড়া নেন। এ সময় তিনি বাড়ি না থাকায় তার স্ত্রী জেসমিন বেগমের সঙ্গে তাদের মৌখিক চুক্তি হয়। রবিবার ২৮ জুন এর লিখিত চুক্তি হবার কথা ছিল। তারা কিছু আসবাবপত্র রেখে এক নারী ও ২ পুরুষ এনজিও কর্মী হিসেবে কাজ চালাতেন। ওই এনজিওটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ঋণ নিতে ইচ্ছুকদের ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রায় ২০ জন ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে টাকা জমা নিয়েছেন। অফিসটি তালাবদ্ধ করে গোপনে ম্যানেজারসহ কর্মচারিরা উধাও হয়েছে।
এ বিষয়ে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) মো. রেজাউল করীম রাজীব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ওই এনজিওর ভূক্তভোগি ২৫/৩০ জন গ্রাহক তাদের সঞ্চয় বই থানায় জমা দিয়েছেন। এ সব বইগুলোযাদের নামে রয়েছে তারা বিভিন্ন অংকের ঋণ তুলতে ওই এনজিও সংস্থায় সঞ্চয় হিসেবে টাকা জমা দিয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। ঘর মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত এনজিও ম্যানেজারকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এনজিওর গ্রাহকরা অসাধু কর্মকর্তার দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যাতে গ্রাহকরা তাদের সঞ্চিত সমুদয় অর্থ ফেরত পেতে পারেন।