চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসারাদেশে যখন অঘোষিত লকডাউন চলছে, বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-অফিস আদালত, তখনও চালু ছিল দেশের চা বাগানগুলোর কার্যক্রম। প্রতিদিন কাজ করে যেতে হয়েছে শ্রমিকদের। চা শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ঝুঁকি বিবেচনায় বাগানের কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানানো হলেও তা আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। বাগানগুলো সংরক্ষিত এলাকা, বাইরের মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। তাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও কম- এমন যুক্তি দেখিয়ে চা বাগানে উৎপাদন অব্যাহত রাখেন বাগান মালিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
তবে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখা যায়নি চা বাগানের শ্রমিকদের। এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বাগানে অন্তত সাতজন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন দু’জন। এছাড়া গত তিনমাসে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আরও দুই শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তবে চা শিল্পের উদ্যোক্তা ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সেরর সভাপতি আফজাল রশীদ বলেন, চা বাগানে এখন পর্যন্ত যাদের করোনা শনাক্ত হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই হয় নিজে কিংবা তাদের পরিবারের কেউ বাইরে থেকে এসেছেন। বাগানে কাজ করা অবস্থায় কেউ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নেই।
দেশে ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এগুলোতে কাজ করেন দেড় লাখের মতো শ্রমিক। শ্রমিকদের প্রায় সকলেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির বাসিন্দা। নূন্যতম মজুরিতে বাগানে কাজ করতে হয় তাদের। দেশের মধ্যে সিলেট বিভাগেই ১৩৪টি চা বাগান রয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৫ জুন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কাপনাপাহাড় চা বাগানের দুই নারী শ্রমিকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। শনাক্ত হওয়ারা সম্পর্কে শ্বাশুড়ি-পুত্রবধূ। তারা বাড়িতেই আইসোলেশনে আছেন।
গত ২৬ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিক পরিবারের এক কলেজ ছাত্রীর করোনা শনাক্ত হয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৫ এপ্রিল মারা যায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চণ্ডীছড়া চা-শ্রমিকের শিশুসন্তান। ২৩ মে জুড়ী উপজেলার রাজকী বাগানের দুই শ্রমিকের করোনা শনাক্ত হয়। আর গত মে মাসে কমলগঞ্জে সনছড়া বাগানের এক বৃদ্ধ শ্রমিক করোনায় মারা যান।
চুনারুঘাটের চা শ্রমিক শিশুর করোনায় মারা যাওয়া প্রসঙ্গে ওই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিৎ রায় দাশ জানান, ”বাগানে কাজ করতে গিয়ে নয়, বরং ঢাকায় থাকার কারণে ওই শিশুসহ দুজন নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল। এছাড়া ওই শিশু ক্যান্সারেও আক্রান্ত ছিল।”
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চা-সংসদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে সব চা বাগানে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শ্রমিকদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হয়েছে। তাদের মাস্ক-সাবানসহ সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করতে বলা হয়েছে। শ্রমিকেরা তা মেনেও চলছেন। চায়ের ব্যবসা এমনিতেই খারাপ। ছুটি দিলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এর প্রভাব শ্রমিকদের ওপরও পড়বে। সরকারও চা বাগানে ছুটি ঘোষণার কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
তবে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, বাগানে অবস্থানকারী অনেককে কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় বাইরে যেতে হয়। কাজ শেষে তারা আবার বাগানে পরিবারের কাছে ফিরে আসে। বাইরে কাজ করা লোকদের মাধ্যমেও বাগানে তাদের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। আবার বাগানে কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব তেমন মানা হয় না। ফলে বাগানের একজন আক্রান্ত হলে তা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রামভজন কৈরি বলেন, ”অনেক চা-বাগান শ্রমিকদের নিরাপদ দূরত্বের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। তারা শ্রমিকদের হাত ধোয়ার সাবান ও মাস্ক দেয়নি। এসব শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।