ফকির শহিদুল ইসলামঃ আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা আতঙ্কে গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খুলনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রান্তিক গরু খামারিরা। খুলনা শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। দেশে বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রান্তিক গো-খামারিরা তাদের গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
খামারি মালিকরা বলছেন, গরু লালন পালনে খরচের তুলনায় প্রতি গরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হবে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই খামার বন্ধ করতে বাধ্য হবেন অনেকেই।
স্থানীয় একাধিক খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনবানির ঈদকে কেন্দ্র কওে কেসিসির ব্যাবস্থপনায় নগরীর জোরাগেটে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরুর হাট বসে । এ ছাড়াও নগরীর বাইরে ডুমুরিয়ার শাহাপুরসহ খুলনা জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় কোরবানীর গরুর হাট বসে । চলতি বছরে করোনা ভাইরাস খুলনাঞ্চলে মহামারী আকার ধারন করায় বড় ও ক্ষুদ্র গরু পালন খামারীরা পড়ছে বিপাকে । এ অবস্থার প্রান্তিক খামারীরা গরুর ন্যায্য মুল্য পাওয়া এবং দিনকে দিন গো-খাদ্যের দাম দৃদ্ধি ও অপরদিকে গরুর দাম কম হওয়ায় দিন দিন তাদের দুশ্চিন্তা যেন বাড়ছে।
প্রতি বছর কোরবানীর সময়ে গরু নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা আতঙ্কে গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এমন অবস্থায় খুলনার প্রান্তিক খামারিদেও দুশ্চিন্তা লাগবে প্রাণিসম্পদ দফতর এবার অনলাইনে গরু বিক্রির পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে খুলনা মহানগরীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র খামারীদের গরু বিক্রির ন্যায্যমুল্য চিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ দফতর।
ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া গ্রামের ইউছুফ আলী জানান, তিনি ঈদুল আজহাকে টার্গেট করে ২৭টি গরু নিয়ে একটি খামার গড়েছেন। খামারে থাকা এক একটি গরু প্রায় এক বছর আগে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় কেনা। এসব গরু বাড়তি লাভের আশায় লালন-পালন করলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে যে দাম হচ্ছে তাতে মনে হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রতি গরুতে লোকসান গুনতে হবে। খামার মালিক মো. আওছাফুর রহমান জানান, বর্তমানে তার খামারে ছোটবড় মিলে ৩৫টি গরু আছে। গরু গুলোকে কোরবানির ঈদে বিক্রি করার জন্য গত ছয় মাস ধরে তিনি লালন-পালন করছেন। বাজারে গরুর যে দাম তাতে চিন্তা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কয়ছার উদ্দীন নামে এক খামারি জানান, গরু পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। তাই তিনি গত আট বছর ধরে খামার করে গরু বিক্রি করছেন। তার খামারে ২৫টি গরু রয়েছে। একদিকে গো-খাদ্যের চড়া দাম তার ওপর করোনায় বাজার মন্দা হওয়ায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় মোট ৬ হাজার ৮৯০ জন গবাদিপশুর খামারি রয়েছেন। সব থেকে বেশি খামার রয়েছে তেরখাদা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায়। এসব খামারে মোট গবাদিপশু আছে ৪৫ হাজার ১৪৮টি। এর মধ্যে ৪০ হাজার ৯৬৮টি গরু ও ৪ হাজার ১৮০টি ছাগল ও ভেড়া।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসএম আউয়াল হক বলেন, খুলনার খামারে থাকা বেশির ভাগ পশু বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তত করে রাখা হয়েছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে খামারিরা অনেকটা বিপদে পড়েছেন। আমরা খুলনার অন্যান্ন প্রশাসনের আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে করে স্মাট খামারীদের নিয়ে অনলাইন গরুর হাট বা অনলাইনে গরু বিক্রির প্লাটফরম তৈরি করা যায় । তাদের মনোবল শক্ত রাখতে অনেক চেষ্টা করছি। অন্যান্য বছর খুলনায় কোরবানির পশুর মোট চাহিদার ৯৯ শতাংশ স্থানীয় খামারিরা পূরণ করতেন। এ বছরও তারা ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য গরু-ছাগল ও ভেড়া পালন করছেন। তবে করোনার প্রকোপ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ এবার কোরবানি দেবে না। এর ফলে খামারিদের পশুও কম বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছর প্রতিটি গরুতে একজন খামারি ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ করতেন। এবার লাভের অংশটা অনেক কমে যাবে। অনেকের লোকসানও হতে পারে। তবে আমরা প্রাণিসম্পদ দপ্তর খুলনার খামারিদের কথা চিন্তা করে অনলাইনে গরু বিক্রির চিন্তা ভাবনা শুরু করেছি এবং এই কার্যক্রম আমরা বাস্তবায়ন করবো। কেননা ক্ষুদ্র খামারীরা লোকসানে পড়লে পরবর্তী বছর তারা গরু লালন পালনে উৎসাহ হারিয়ে খামার বন্ধ করে দিবে । সংগত কারনেই আমরা খামারীদের ন্যায্য মুল্য চিশ্চিত করতে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে গরু বিক্রির সাধ্যমত চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।