ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও তিস্তা, ধরলা ও বাঙ্গালীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, ভারত থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানির প্রভাবে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচ গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃপাহাড়ি ঢল আর ভারি বর্ষণের ফলে উত্তরের নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে চর ও উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও যমুনা নদীর পানি কোথাও কোথাও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঘর-বাড়িসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও তিস্তা, ধরলা ও বাঙ্গালীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি সাত সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপরে, নুনখাওয়া পয়েন্টে দুধকুমারের পানি ২০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপরে এবং চিলমারীঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারত থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানির প্রভাবে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচ গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার ৪৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে শুরু করেছে। অবশ্য জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও পানি বৃদ্ধির তেমন আশঙ্কা নেই।
রংপুর বিভাগের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, ভারি বর্ষণে প্রধান নদ-নদীর পানি ও উজানি ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার, কাউনিয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার আর কুলাঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের ১৬৫টি চরের মানুষ এখন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। জেলার সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার পাশাপাশি সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এলাকার বেশিরভাগ মানুষই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। আর বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো রয়েছেন পানিবন্দী অবস্থায়।
জেলার সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার পাশাপাশি সারিয়াকান্দি উপজেলাতেই ৯টি ইউনিয়নের ৬৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে সাড়ে ১২ হাজার পরিবারে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি কমে ৪১ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৭২.৩ সেন্টিমিটারে রয়েছে।
এদিকে টাঙ্গাইল জেলার ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত শনিবার সকালে বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন ফসলসহ পানিতে তলিয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। নাগরপুরের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, নদীভাঙন ও বন্যা থেকে বাঁচতে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। এদিকে হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় গবাদি পশু ও ফসল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, নাগরপুর নদীর পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধের নিচের অংশের ব্লকগুলো সরে গিয়ে বাঁধ ভেঙে যায়। এছাড়া আরও একটি মাটির বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশে পাথরের ব্লক ফেলে মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।