চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃঝিনাইদহের ডাকবাংলাবাজার ত্রীমোহনী থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়ক ও ২১২ মিটার আরসিসি পাকা ড্রেন নির্মাণে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিন্মমানের কাজের খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা শুভ রাস্তা ও ড্রেনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু একদিন না যেতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য করে সেই কাজ শুরু করেছে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের চিহৃিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও ঠিকাদার। এ নিয়ে এলাকায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, অত্যন্ত নিম্নমানের রড, পাথর, বালু সিমেন্ট ব্যবহার করে সড়কটির পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এরপর ঘটনাস্থল থেকে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দারের মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। সে সময় নির্বাহী প্রকৌশলী সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে বলেন। এক পর্যায়ে নির্মাণকাজে ব্যবহার করা নিম্নমানের পাথরসহ নির্মাণসামগ্রী নিজে হাতে সংগ্রহ করে কাজ বন্ধ রাখার জন্য প্রকাশ্যে নির্দেশ দেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আনোয়ার হোসেনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, তার নির্দেশ অমান্য করে সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুকুল জ্যোতি বসু ও ঠিকাদার মিলে আবর নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
এ দিকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুকুল জ্যোতি বসু নিন্মমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, শিডিউল মোতাবেক নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পিএমপি প্রকল্পের অধীন ঝিনাইদহের ডাকবাংলাবাজার-কালীগঞ্জ সড়কের ২৩ কিলোমিটার মজবুতিকরণসহ ওয়ারিংকোর্সের কাজ চলছে। খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড কাজটির প্রকৃত ঠিকাদার। তবে বাস্তবে কাজটি করছেন স্থানীয় ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম। সড়কটির নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। তিনি আরো বলেন, সড়কের পানি নিষ্কাশনের জন্য ডাকবাংলা বাজার এলাকায় ২১২ মিটার পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য আলাদাভাবে অনুমান ২৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ড্রেনটি নির্মাণ কাজের জন্য আমিনুল হক এন্টারপ্রাইজ নামের অপর এক ঠিকাদারকে নিয়োগ করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা নিম্নমানের পাথরসহ নির্মাণসামগ্রী আগে থেকেই বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরো বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা হওয়ার পরে ১৫ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের ওয়ার্ক চার্জ (অস্থায়ী) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত তাজুল ইসলাম নামের একজন কার্যসহকারীর (ওয়ার্ক অ্যাসিস্টেন্ট) দায়িত্ব পালন করছেন। জেলার গুরুত্বপর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক মহাসড়ক মেরামত সংস্কার মজবুতিকরণ কাজসহ ডাকবাংলাবাজার-কালীগঞ্জ সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ কাজেরও কার্যসহকারী হিসেবে নিয়োজিত তিনি। ওয়ার্ক চার্জ হিসেবে নিয়োগ করা ওই ট্রাক চালককে দিয়েই কার্যসহকারীর কাজ করানো হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা।