চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃমহামারী করোনা প্রাদুর্ভাবে দেশের স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাচ্ছে, সেখান থেকেই বেরিয়ে আসছে নানা অনিয়মের প্রমাণ। প্রতারণার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানের তালিকা ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে রয়েছে। ওই তালিকায় অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে এতসব কিছুর পরও স্বাস্থ্যখাতে খুলনার রাঘর বোয়ালরা রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিন্ডিকেট করে বছরের পর বছর ধরে নিন্মমানের ওষুধ সরবরাহ সিন্ডিকেট, ভারী চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়ের সিন্ডিকেট, খুলনার সদর হাসপাতালে ১১ কোটি টাকার চিকিৎসা সরজ্ঞাম না কিনেই অর্থ লোপাট, রোগীর পথ্য সরবরাহ, ঠিকাদারী সিন্ডিকেট সবই রয়েছে বহাল তবিয়তে। মাঝে মধ্যে ছোট খাটো ক্লিনিক হাসপাতালে অভিযান চালানো হলেও বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে যেন সমিহ করে চলছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৭০ শতাংশ ক্লিনিক হাসপাতালের নবায়ন করা নেই। অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে। মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সিন্ডিকেটের সহায়তায় ওসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বছরের পর বছর ধরে অনৈতিক কাজ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারির সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই চক্রটি আরো সক্রিয় হয়ে উঠে।
এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন অভিযান চালায় না স্বাস্থ্যবিভাগ। অভিযোগ রয়েছে, যারা এসব দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন, প্রতিমাসের তাদেরকে মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিময় হয়। জানা যায়, প্রয়োজন না থাকলেও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য কেনা কান্সার থেরাপী মেশিনটি খোলা আকাশের নীচে থেকেই মেয়াদোত্তীর্ন হয়ে গেছে। তারপরও দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। নিন্মমানের এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের প্রতিবাদ করায় খুমেক হাসপাতালের সাবেক পরিচালককে পাবনা বদলি করা হয়েছে। যিনি হাসপাতালের দুর্নীকি বন্ধ করতে আপ্রান চেষ্টা করেছেন।
এদিকে করোনা দুর্যোগময় ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী সরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করে মনোবল ফেরান। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো করোনার চিকিৎসা দূরের কথা, অন্যান্য রোগে আক্রান্তদেরও চিকিৎসা সেবা দেয়নি। করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে পথেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি উচ্চ আদালত থেকেও রোগী ভর্তির আদেশ দেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আর জনবল সংকটের কারণে নমুনা পরীক্ষার পরিধি বাড়ানো যাচ্ছিল না।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে মানুষ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। এ অভিযান অব্যাহত রাখার পক্ষে ব্যাপক জনমতও তৈরি হয়েছে। সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও চলমান অভিযান আরো জোরালো করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের মতে, বছরের পর বছর ধরে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার নামে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। করোনা পরিস্থিতি না এলে হয়তো এদের মুখোশ উন্মোচন হতো না।