ফারুক হাসান হিটলু :: মানুষ ক্রমাগত বিকাশের ধারাবাহিক পথে চলে। গোত্র,সমাজ, রাষ্ট্র, নিজস্ব পরিচয় নির্মান করে। জ্ঞান বিজ্ঞানে সম্পদশালী রাষ্ট্র গুলো মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছে। তাদের এক একটি শহর বিশ্বময় নিজস্ব গুণে ভাস্বর।
তথ্য প্রযুক্তির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি, বইমেলার জন্য জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুর্ট, অর্থনৈতিক সম্মেলনের জন্য সুইজারল্যান্ডের দাভোস ,চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য ফ্রান্সের কান, বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শান্তিনিকেতন ,ইন্ডিয়া, প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্যের জন্য ভিয়েতনামের হালং বে, প্রভৃতি শহর এক নামে বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত। মানব সভ্যতায় শহর গুলোর ভূমিকা অতুলনীয়। আশাবাদ এটাই বাংলাদেশও একদিন উন্নত হবে। দেশের এক একটি শহর সারা বিশ্বে দিপ্যমান হবে। প্রিয় খুলনাও স্বমহিমায় বিশ্ববাসীর কাছে হবে বরনীয়।
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আমরাও নির্ধারন করতে পারি খুলনা শহরকে কিভাবে গড়ে তুলবো। রুপসা ও ভৈরব নদী তীরের এই শহর। অদূরে প্রকৃতির সপ্তাশ্চর্য সুন্দরবন। ভিয়েতনামের হা লং বে এর মতো গড়ে তুলতে পারি পর্যটন নগরী। সেখানে দেখি প্রকৃতিকে আগলে রেখে, পরিকল্পিত নগর কিভাবে বিশ্ববাসীর সামনে উম্মুক্ত। খুলনার প্রকৃতি এই সম্ভাবনা তুলে ধরে।
তথ্য প্রযুক্তি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমাদের শহরের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। এখানে রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন হতে যাওয়া শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বমানের জ্ঞান চর্চায় হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, এম,আই,টি, প্রিন্সটন, বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে, অনুসরণের পথ তৈরী করলে, নতুন জ্ঞান সৃষ্টির সুযোগ খুলনাকে শিক্ষা নগরীতে রূপান্তর করবে। অর্থনৈতিক সামাজিক ক্ষেত্রে এই রূপান্তরের ভূমিকা অসীম। বিশ্ববাসী যেমন ইন্ডিয়ার সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্গালুরুকে চিনে নেয় একইভাবে খুলনা শহরও গড়ে উঠতে পারে।
বন্দর নগরী খুলনায় শিল্পায়নের জন্য অপার সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। অদূরে মোংলা সমুদ্র বন্দর সমুদ্র বানিজ্যের পথ উন্মুক্ত করেছে। খুলনা শহরের মধ্যেই খালিশপুরে পাটকল গুলোর বিপুল জায়গায় আদমজী ইপিজেড এর মতো শিল্পায়ন সম্ভব। মৎস আহরণ ও রপ্তানিমুখী খাতের বিকাশের সুযোগ আছে। রুপসা ও ভৈরব নদীর দুই তীরে জাহাজ নির্মাণ শিল্প আরও পরিকল্পিত ও আধুনিক ভাবে গড়ে তোলা যায়। কৃষি ভিত্তিক শিল্পায়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনা শহর হতে পারে সংস্কৃতির শান্তিনিকেতন। উপমহাদেশের প্রথম আর্ট স্কুল ছিল দৌলতপুরে। শিল্পী শশীভূষণ পাল প্রতিষ্ঠিত। চিত্রকলা, চলচ্চিত্র, লোকগাথা, সংগীত,নাট্যকলার বিকাশের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করলে ধীরে ধীরে নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠবে। বেরিয়ে আসবে আগামীর এস,এম, সুলতান,জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান’রা। ভেনিস ও লোকার্ন শহরের মতো চলচ্চিত্র উৎসবও খুলনাতেই হতে পারে। তৈরি হতে পারে সংগীত, চলচ্চিত্রের আগামীর শ্রেষ্ঠ সন্তান।
ক্রীড়াঙ্গন ও শরীর চর্চার জন্য বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান গড়ে ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে হবে। অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানের অভাবের মাঝেও প্রচুর খেলোয়াড় খুলনা থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কৃতিত্ব প্রদর্শন করছে। সুপরিকল্পিত ভাবে এগোলে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এ অঙ্গনে।
খুলনা কি বিশেষায়িত কোন শহর হবে, নাকি শিক্ষা, পর্যটন, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, শিল্পায়নের মিশ্র কাঠামোয় গড়ে উঠবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে।