স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণীর সাধারণ কর্মচারী হয়েও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন গাড়িচালক আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেক (৬৩)। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি, চাঁদাবাজি, জাল টাকার ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তার শত কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র, জাল নোট ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোরে র্যাব-১ এর একটি দল আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেককে (৬৩) গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, গাড়িচালক আব্দুল মালেকের স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি সাততলা বিলাসবহুল ভবন, ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম, ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় সাড়ে চার কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন রয়েছে।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, সম্প্রতি র্যাবের প্রাথমিক গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর তুরাগ এলাকায় জনৈক আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল টাকা ব্যবসা, চাঁদাবজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়।
তার বিরুদ্ধে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি তার এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি এবং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। তার ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে সর্বদা আতঙ্ক বিরাজ করে। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ সংশ্লিষ্ট এলাকায় চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং জাল টাকার ব্যবসা করে আসছেন।
র্যাবের অনুসন্ধানে তার আয়-ব্যায়ের সাথে দৈনন্দির জীবন যাত্রার মান ও সম্পদের বিস্তর অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়।
একজন তৃতীয় শ্রেণীর সাধারণ কর্মচারী হয়েও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে বিপুল পরিমাণে অর্থ গচ্ছিত আছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-১ বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে আজ ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, তিনি পেশায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলের একজন ড্রাইভার। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী। ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করেন।
পরে তিনি ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল নোট ব্যবসাসহ অস্ত্রের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শনপূর্বক সাধারণ মানুষের নিকট হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
র্যাব-১ সিও শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল মালেকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির একটি আনুমানিক হিসাব র্যাবের নিকট আসে। জানা গেছে, তার স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামাড়পাড়ায় ২টি ৭তলা বিলাসবহুল ভবন আছে, ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন আছে। দক্ষিণ কামাড়পাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা যায়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসায় জড়িত থাকা, অস্ত্র ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে পৃথক দুটি মামলা হবে। তাকে রাজধানীর তুরাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে র্যাবের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।