চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃরাখাইনে জাতিগত নিধন ও হত্যার শিকার বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের আস্থার ঘাটতি রয়েছে, যা দূর করতে মিয়ানমারকেই কাজ করতে হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও দুপুর পর্যন্ত কেউ ফিরতে রাজি না হওয়ায় বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধান তাদের কাছেই বলে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের মূলে আস্থার অভাব রয়েছে। এজন্য আমরা সবশেষ চতুর্থ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে প্রস্তাব করেছিলাম, আস্থা তৈরির জন্য কক্সবাজারের একাধিক শিবিরে যেসব রোহিঙ্গা মাঝি বা নেতা রয়েছেন তাদের রাখাইন নিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো হোক, যেন রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার যে অভাব আছে তা দূর হয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতিসহ মিয়ানমারের রাখাইনের পরিস্থিতি ঘুরে দেখার জন্য একটা কমিশন গঠনেরও পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো গাফিলতি নেই বলে দাবি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আমরা প্রস্তুত। আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি।
বৃহস্পতিবার থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর ব্যাপারে সরকার আশাবাদী ছিল বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রত্যাশা করিনি যে রোহিঙ্গারা জেতে চাইবে না। এটা খুবই দুঃখজনক। সরকার চেয়েছে বৃহস্পতিবার থেকেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হোক।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সরকার এখনও আশাবাদী বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা জোরপূর্বক কোনো কিছু করবো না। তবে আমরা প্রক্রিয়াটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব।
প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম দেখতে মিয়ানমার ও চীনের প্রতিনিধিরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে রয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের ফিরে না যাওয়ার ব্যাপারে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলে আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরে না যায় সেজন্য অনেক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা শিবিরগুলোতে প্রচারনা চালাচ্ছে। চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের আরামের জীবন থেকে আরাম কমানো হবে, যাতে তারা ফিরতে রাজি হয়।
মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও লিফলেট বিলির প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা প্ল্যাকার্ড বা লিফলেট করে দিচ্ছে, তাদের আমরা চিহ্নিত করছি। তারা বিভিন্ন ডিমান্ড করছে। তাদের ডিমান্ডের কাছে আমরা জিম্মি হতে পারি না।
অন্যদিকে প্রত্যাবাসনের সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা না পেলে মিয়ানমারে যেতে নারাজ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।
বৃহস্পতিবার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, গত কয়েকদিন তালিকায় নাম থাকা ২৯৫টি পরিবারের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। কিন্তু নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তাসহ তাদের দাবি-দাওয়া না মানলে কেউ মিয়ানমার ফিরে যেতে রাজি হননি।
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত শর্ত মানলেই কেবল মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতারা। তাদের অভিযোগ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য যেসব শর্ত বাংলাদেশ সরকার উত্থাপন করেছে মিয়ানমার সেগুলো অগ্রাহ্য করে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে।
রোহিঙ্গা নেতা হামিদ হোসেন ও মোঃ ইলিয়াছ দাবি করেন, প্রত্যাবাসনের নামে ৪৫টি ক্যাম্পে বন্দি করে রোহিঙ্গাদের ফের অমানবিক নির্যাতনের পাঁয়তারা করছে মিয়ানমার সরকার। তাদের হারানো ১৯৮টি পাড়া-মহল্লায় পুনর্বাসন, সহায় সম্পদ ফেরত ও নাগরিকত্বের দাবি না মানা পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফিরে যাবে না।
এর আগে গত বছর ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিলেও মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা তৈরি না হওয়ায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়।