সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং স্বল্প আয়ের একজন মানুষ দেবাশীষ মন্ডল। পারিবারিকভাবে বসতভিটা ছাড়া ৪ শতাংশ পতিত জমির অধিকারী তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ভারী কোন কাজ করতে না। বাধ্য হয়ে সকটুকু সঞ্চয় এবং ঋণদেনা হয়ে তৈরী করেছেন মটর চালিত ভ্যান যা, তার আয়ের একমাত্র সম্বল। শরীরের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অনিয়মিতভাবে ভ্যান চালিয়ে এক প্রতিবন্ধী শিশু সহ পরিবারের ৪ জন সদস্যের দৈনিক খাবার তুলে দেওয়াই তার জন্য কষ্টকর। পর্যাপ্ত জমি ও কারিগরী জ্ঞান না থাকায় কৃষি উৎপাদন তার জন্য লাভ জনক হয়ে ওঠে না। সীমিত আয় দিয়ে পরিবারের মৌলিক চাহিদা পুরন করতে গিয়ে তিনি দিন দিন দারিদ্রার চরম পর্যয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে (আমফান) তার মাথাগোজার একমাত্র অবলম্বন বসত বাড়ির একাং ভেঙ্গে যায়। দারিদ্রতা ও হতাশার মধ্যদিতে অতিবাহিত হতে থাকে তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত। বে-সরকারি সংস্থা ডিআরআরএ কর্তৃক বাস্তবায়িত সিসিডিআইডিআরএম প্রকল্প, ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে সন্ধান পাই দেবাশীষের। পরবর্তীতে প্রকল্পের পক্ষ থেকে তার বাড়ি পরিদর্শন করা হয় এবং জীবিকায়নের উপকারভোগীর জরিপের মধ্যে অন্তরর্ভুক্ত হয়। প্রকল্পের উপকারভোগীর জন্য নির্ধারিত বৈশিষ্ট বিদ্যমান থাকায় ও জরিপে স্কোর ইতিবাচক হওয়াই তিনি উপকারভোগীর চুড়ান্ত তালিকায় স্থান পায়। কাজের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ এবং প্রকল্পের চুড়ান্ত তালিকাভুক্ত হওয়াই তার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকাররি- বেসরকারি বিভাগের সাথে তিনি পরিচিতি লাভ করেন এবং আধুনিক চাষাবাদ সর্ম্পকে কারীগরি জ্ঞান লাভ করতে থাকেন, ফালে কম খরচে তিনি তার পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে থাকেন। পর্যায়ক্রমে তিনি এবং তার স্ত্রী এর সহযোগীতায় একটি বাস্তবায়নযোগ্য ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা তৈরী করেন এবং সে অনুযায়ী চাষাবাদ অব্যহত রাখেন, এর ফলে চাষের আওতায় এসেছে তার বসত ভিটার প্রতিটি অংশ, উৎপাদিত হচ্ছে বহুমুখী ফসল। তার পতিত জমি এখন রুপান্ত্রিত হয়েছে এক শষ্যপুরিতে। পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বিক্রয় ও করছেন। বাড়িতে সবজী চাষ এবং মটর ভ্যান চালিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন তার সফলতার দ্বারপ্রান্তে। খোলা হয়েছে ব্যাংক হিসাব, বাড়ছে লেনদেন। পরপর তিনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে নানান ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে এখন পর্যন্ত তার ব্যাংক হিসাবে জমা আছে প্রায় ২,২৫০টাকা যা, আগামী শীতের সজবী বিক্রি করে এর পরিমান কমপক্ষে ৬,০০০ পর্যন্ত নিতে চান তিনি। নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং আর জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে নিয়ে দেবাশীষ মন্ডল ও তার পরিবার যেভাবে ঘুরে দাড়িয়েছেন তা সত্যিই প্রশাংসার দাবিদার।