ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট সংকট থেকে উত্তরণে দেশের আলেমরা সরকারকে যে ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, আলেমদের সঙ্গে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। যেহেতু আমরা আলোচনা শুরু করেছি, শিগগির এর একটি ফলপ্রসূ ফলও পাবেন। তারা (আলেমরা) যে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন, সেসব নিয়ে আলোচনা চলবে। আমরা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করব না। আমরা সংবিধানের বাইরে কোনো কিছুই করব না।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ভাস্কর্যের বদলে মিনার নির্মাণে আলেমরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন সে বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা ভাস্কর্যের বিপরীতে মিনার স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আলেমরা বঙ্গবন্ধুর নামে মিনার স্থাপনের প্রস্তাব করছেন। কী করা হবে, এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আলেমরা আন্দোলন করবেন না বলে কথা দিয়েছেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি– একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কেউ যেন ভাঙচুর বা আইনশৃঙ্খলা নষ্ট না করে, সে বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ফেসবুকের অপপ্রচার বন্ধে আমাদের সজাগ হতে বলেছেন। তারা (আলেমরা) বলেছেন, কোনো রকম আন্দোলন তারা করবেন না। তারা ৫টি প্রস্তাব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে চান।
ভাস্কর্য সরানো হবে কিনা বা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হবে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয় নিয়েও আলোচনা চলছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে তো পূজা করা হয় না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য করা হয়েছে, যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাকে স্মরণ করতে পারে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আওয়ামী লীগ নতজানু রাজনীতি করে না। আলোচনা শুরু হয়েছে এবং চলবে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সোমবার রাতে বৈঠক করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় যান। মন্ত্রীর সঙ্গে তারা ঘণ্টাখানেক আলোচনা করেন।
বৈঠকে আলেমদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার (বেফাক) সভাপতি মাহমুদুল হাসান। ১২ জন আলেম ওই বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির নুরুল ইসলাম জিহাদি সাংবাদিকদের জানান, আলোচনা সফল ও সন্তোষজনক হয়েছে, আলোচনা চলবে। তবে এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিস্তারিত জানাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় শীর্ষ আলেমদের বৈঠক থেকে ৫ দফা প্রস্তাব জানানো হয়। ওই বৈঠক থেকেই সরকারের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়।
রাজধানীর দোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ বন্ধের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সংগঠন আন্দোলন করে আসছে। এর মধ্যে ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। গ্রেফতার করা হয় দুই মাদ্রাসাছাত্র এবং দুজন শিক্ষককে।
এ ঘটনায় উসকানির অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের দুজন নেতা এবং ইসলামী আন্দোলনের এক নেতার নামে মামলাও হয়েছে।