মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় অবহেলিত দুটি গণকবরে নির্মীত হচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভ।
গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নের ভাটিপাড়া নীলকুঠির পাশে ৭১ লাখ ১৭ হাজার টাকা ও একই ইউনিয়নের সাহারবাটি টেবুখালি মাঠের গণকবরে ৭০ লাখ ৪৪ হজার টাকা ব্যয়ে দুটি বধ্যভূমি নির্মীত হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ মেহেরপুর।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলায় মোট ৬টি বধ্যভূমি নির্মীত হবে।
প্রাথমিকভাবে চলতি অর্থবছরে এই দুটি বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভু কুমার পাল জানান, ইতোমধ্যে গাংনীর ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্কের পাশে ও সাহারবাটি টেবুখালির বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
এছাড়া একই উপজেলার কাজীপুর সীমান্তে ৬ গণকবর, বামন্দী গণকবর, সদর উপজেলার মেহেরপুর সরকারি কলেজ মোড়ের কবরস্থানের পাশ্চিম পাশের গণকবর ও মুজিবনগর উপজেলার মাঝপাড়াতে অবস্থিত গণকবরটিকে বধ্যভূমির আওতায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়ার পর গণপূর্ত বিভাগ ইতোমধ্যে সার্ভে করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
এর মধ্যে গাংনী উপজেলার বামন্দীর গণকবরটির প্রস্তুত চলছে ও মুজিবনগর উপজেলার মাঝপাড়ার গণকবরটির সাইট প্ল্যান তৈরি এবং রিডিজিটাল সার্ভের হার্ড ও সফট কপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাটানো হয়েছে। তবে মেহেরপুর শহরের কবরস্থানের পাশের বধ্যভূমিটি ইতোমধ্যে মেহেরপুর পৌরসভা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে। গাংনী উপজেলার কাজীপুর সীমান্তে ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর এ প্রকল্পের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে জানান, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট বিধায় ওখানে নতুন কোনো কিছু স্থাপন করা যাবে না। তাছাড়া এলজিইডি কর্তৃক কবরগুলি সংরক্ষিত আছে।
এদিকে সাহারবাটি টেবুখালির গণকবরটির ইতোমধ্যে সীমানা প্রাচীর ও কবর দুটি বাধা রয়েছে। নতুন করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হারেজ উদ্দিনের সন্তান বুলু মণ্ডল ও গাংনী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা। সাবেক কমান্ডার মুনতাজ আলী। তারা বলেছেন, হানাদার বাহিনী আমাদের বাবাসহ ৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে এনে এখানে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়। কয়েকদিন পর এই আট শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দুটি কবর খুঁড়ে মাটি দেন স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন পর তাদের কবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। এবার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মীত হচ্ছে ফলে আমরা দেখে দেখতে পারছি। সত্যিই আজ আমরা গর্বিত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার নুরুল হুদা বলেছেন, বর্তমান সরকার গণকবরগুলোকে সংরক্ষণ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে এজন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জেলার সবগুলো বধ্যভূমিই এ প্রকল্পের আওতায় এনে সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়ন করবেন সে প্রত্যাশা করছি আমরা।