আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনি বিএনপির ভোট ডাকাতির রেকর্ড নাকি কেউ ভাঙতে পারবে না বলেছেন। উনি কি ভাঙতে চান?রেকর্ড ভাঙতে চান বলেই ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে চরম ভোট ডাকাতি হয়েছে। এ কোন সমাজে এলাম আমরা, যেখানে রাজনীতিবিদরা ভোট ডাকাতির রেকর্ড ভাঙতে চান।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের স্মরণে সভার আয়োজন করে ‘চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ স্মৃতি পরিষদ’।
নতুন বছরে বিএনপি ‘সুন্দর বাংলাদেশ’ প্রত্যাশা করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অনেক আশা করতে চাই, অনেক স্বপ্ন দেখতে চাই- এই বছরটা আমাদের জন্যে অনেক সুন্দর হয়ে আসবে। করোনাসহ সবকিছু মিলিয়ে ২০২০ সালে এই যে একটা কষ্ট গেল- আমাদের জীবন যে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল, তা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। স্বাধীন বাংলাদেশ চাই, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে পথ আমাদের দেখিয়েছিলেন সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে স্বাধীন জনগণের জন্য একটি রাষ্ট্র, যেটি হবে বহুদলীয়। অর্থাৎ আমাদেরকে অবশ্যই ভিন্নমতকে ধারণ করতে হবে, অন্যের কথা বলার স্বাধীনতা দিতে হবে- সেইভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ২০২১ সাল আমাদেরকে সেই পথ দেখাক- এটা আমাদের প্রত্যাশা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কোনো প্রভুতে বিশ্বাস করি না, কারো পদানত হতে চাই না। আমরা সেবাদাসে পরিনত হতে চাই না। আমরা মাথা উঁচু করে বিশ্বের দরবারে চলতে চাই। এটাই হচ্ছে আমাদের রাজনীতি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে, একটা হাইব্রিড রেজিমের দেশ। গণতন্ত্র এখানে একটা শংকর গণতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রের কথা বলা হয় কিন্তু তা নেই। আসলে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা গণতন্ত্রের ছদ্মাবেশে আছে। আমরা চেষ্টা করছি, আমরা কথা বলছি, বেরিয়ে আসার জন্য কাজ করছি। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়।
তিনি বলেন, মানুষের কাছে যিনি সবচেয়ে প্রিয় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, তিনি আজকে বন্দি জীবন-যাপন করছেন। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে এখানে মামলা, ৫শ’ ওপরে মানুষ গুম হয়ে গেছে। এখানে হাজারের ওপরে মানুষ খুন হয়েছে। এরা কিন্তু পলিটিক্যাল এক্টিভিস্ট। সাংবাদিক যারা সত্য কথা লেখেন তাদের মধ্যে ১৫৭ জনের বিরুদ্ধে গত বছর মামলা হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে। কোথায় গণতন্ত্র?
ফখরুল বলেন, আমাদের এখানে সবই আছে, এখানে সরকার আছে। বলা হয়- গণতন্ত্র আছে, পার্লামেন্ট আছে, ব্যুরোক্রেসি আছে কিন্তু মানুষের অধিকার নেই। একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়, তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে, থানায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। গত যে বছরটি চলে গেল, সে বছরে তিনশ’ জন মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। নট বাই আদারস, বাট বাই দ্যা গভর্নমেন্ট এজেন্সিজ। কোথায় যাবেন?
প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনের ইউসুফের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার আদর্শ ‘গণমানুষের রাজনীতি’ অনুসরণ করার আহ্বান জানান ফখরুল।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, শাহজাদা মিয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ওলামা দলের শাহ নেছারুল হক, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, প্রয়াত নেতার মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু প্রমুখ।
পরে প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুুফের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত হয়।