করোনাকালেও বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ। কোভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি সংকোচন হলেও বাংলাদেশসহ গুটিকয়েক দেশে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এটি মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত হয়। যদিও চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
করোনার কারণে অর্থনীতি কর্মসংস্থান, রফতানিসহ বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় প্রবৃদ্ধি কমার কথা বলছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, আগামী অর্থবছরে (২০২১-২২) প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় দেশের রফতানি আয় কমে যাওয়া, কর্মসংস্থানে ধাক্কা লাগায় এবং নিু আয়ের মানুষের রোজগার ও আয় কমে যাওয়ার ফলে ভোগ বা খরচ করার প্রবণতা কমেছে।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে। চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে বন্যায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, করোনার কারণে দিনমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ও উৎপাদন খাতের বেতনভুক্ত কর্মীদের জীবন-জীবিকার ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে। শহরের শ্রমিকরাও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বিশেষ করে করোনার সময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৬৮ শতাংশ শ্রমিকের জীবিকার ওপর আঘাত এসেছে।
অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনার কারণে কর খাতের সংস্কার বিলম্বিত হলে কিংবা বড়ো প্রকল্পগুলোর খরচ বাড়লে আর্থিক খাতের ঝুঁকি আরও বেড়ে যেতে পারে। ঘাটতি বাজেট মোকাবিলায় ব্যাংক খাত থেকে অর্থ নেওয়া হলে তা সুদের হারে চাপ সৃষ্টি করবে এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করবে। বহির্বাণিজ্য খাতেও চাপ বাড়বে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বিদেশি ক্রেতাদের কাছে তৈরি পোশাকের চাহিদা স্বাভাবিক হয়েছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় রপ্তানি আয়ের প্রধান এই খাতটিতে ধাক্কা লেগেছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিপ্রবাহ টেকসই নয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা কমে যেতে পারে। এতে প্রবাসী আয় কমে যেতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার বলেন, বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের আয় কমেছে, ভোগও কমেছে। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে করোনার প্রভাব বেশি পড়েছে। এতে সার্বিকভাবে দারিদ্র্যও বেড়েছে। বাংলাদেশের ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষকে সঠিকভাবে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া হলো এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য বড়ো চ্যালেঞ্জ। এই ভ্যাকসিন কেনার সামর্থ্য এবং তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মতো প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করা এখন বড়ো চ্যালেঞ্জ।
প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেখানে ওইসব দেশের নিজ নিজ চলমান অর্থবছরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভারতের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া মালদ্বীপের সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, আফগানিস্তানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ, শ্রীলংকা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, পাকিস্তানে মাইনাস দশমিক ৫ শতাংশ, ভুটানে মাইনাস দশমিক ৭ শতাংশ এবং নেপালে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
২০২০ সালে সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। আর করোনা ভ্যাকসিনের সুষম বণ্টন ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি ঠিক হলে ২০২১ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।