হেফাজতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেছেন, আমাদের মূল লক্ষ্য সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করা। কিন্তু এই যে মাদরাসার ওপরে হামলা, আলেম-ওলামাদের ওপরে হামলা করা হচ্ছে— এভাবে বার বার যদি আঘাত আসতে থাকে তাহলে ওলামায়ে কেরাম, ছাত্রসমাজ, হেফাজতে ইসলাম নাক-কান বন্ধ করে নীরবতার ভূমিকা পালন করতে পারবে না।
রোববার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মাখজানুল উলুম মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। কক্সবাজারের পিএমখালী মাদরাসা, ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার মাদরাসা ও কুমিল্লার কচুয়ায় মাদরাসায় হামলার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হেফাজতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে জজবা আছে, ক্ষোভ থাকে। সেই ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি দিতে পারি। আল্লাহ সবাইকে শুভবুদ্ধি দান করুক। আমরা আইন হাতে তুলে নেব না— আন্দোলন করব, সরকারকে জানাব, সরকারকে বোঝাব।
তিনি বলেন, ইসলামবিরোধী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সংগঠন সরকারবিরোধী কিংবা নির্বাচনমুখী কোনো সংগঠন নয়। আমরা সবসময় সরকারের আইন-কানুন মেনেই আন্দোলন করি। কিন্তু চাঁদপুরের কচুয়া, কক্সবাজারের পিএমখালী, ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার মাদরাসায় যে আক্রমণ হলো, এ কথা কেউ বলে না যে তারা কেন আইন হাতে তুলে নিল? আমরা সরকারকে জানাতে চাই, তারা কেন আইন হাতে তুলে নিল, তারা আইন হাতে তুলে নেওয়ার কে? এর ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মাওলানা জিহাদী বলেন, আমরা জানতে পেরেছি কওমি মাদরাসাগুলোর ক্ষতি সাধনের জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে; চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কওমি মাদরাসার উন্নতি কেন, তাদের প্রতি মানুষের আগ্রহ কেন, শ্রদ্ধাবোধ কেন? এটাকে কেন্দ্র করে কওমি মাদরাসার আলেম ও ছাত্রদের চারিত্রিক অভিযোগে অভিযুক্ত করে দেশের জনসাধারণ, মুসলমান দানশীল যারা মাদরাসাকে ভালোবাসে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার একটা চক্রান্ত।
তিনি বলেন, দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে বছরে একবার সম্মেলন ওয়াজ মাহফিল করা হয়। এটার উদ্দেশ্য যারা দান করেন সেই সাধারণ জনগণও কিছু পাওয়ার হক রাখেন। সেজন্য মানুষের হেদায়েতের জন্য মাহফিলগুলো করা হয়। ইদানীং অনেক জায়গা থেকে দুঃসংবাদ আসছে যে ওয়াজ মাহফিল বন্ধ। তারা তো কোরআন হাদিসের কথা বলে। সেটাকে যদি সরকারবিরোধী-রাষ্ট্রবিরোধী মনে করে তাহলে তো কিছু করার নেই। কিছু বক্তার নামের তালিকা করা হচ্ছে। কিন্তু কেন, কী কারণে করা হচ্ছে? যারা দোষী তাদের বক্তব্য ধরে সরকারের আইন-কানুন দিয়ে ব্যবস্থা নেন। কিন্তু ঢালাওভাবে ওয়াজ মাহফিল বন্ধ কেন?
আল্লামা শফীর মৃত্যুর তিন মাস পরে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছে জানিয়ে মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, আমি অবাক হয়ে যাই এই মামলাটা করার সময় তাদের মনটা কাঁপে নাই। তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী শোক বাণী দিয়েছেন। জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব পাস হয়েছে। কোনো জায়গার মধ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যুর শব্দ তো নাই, গন্ধও নাই। তার বড় ছেলে সবার সামনে বলেছেন, তার পিতার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আমি বলতে চাই, এই মিথ্যা মামলা থেকে তারা যেন রেহাই পান এবং যারা মিথ্যা মামলা করেছেন তাদের যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব প্রমুখ।