একাত্তরের নয় মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দীদশা কাটানোর পর স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমেই তার পরিবারের কাছে আসেননি, বিমানবন্দর থেকে সোজা চলে গিয়েছিলেন বাংলার মানুষের কাছে। এ থেকেই বোঝা যায় তিনি বাংলাদেশকে, বাংলার মানুষকে কতটা ভালোবাসতেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সে সময়ের স্মৃতিচারণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৯০ দিন কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ৪০ পাউন্ড ওজন কমে গিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারিতে মুক্তির পর লন্ডন কিংবা দিল্লিতে বিশ্রাম নেননি। দেশে ফিরে সোজা চলে যান রেসকোর্স ময়দানে। তার সে বক্তব্যে একটি স্বাধীন দেশ পরিচালনার জন্য সম্ভাব্য সব নির্দেশনাই ছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধুর হাতে কিন্তু কোনো কাগজ ছিল না। যা বলেছেন তিনি মন থেকেই বলে গেছেন।
এসময় দলীয় নেতা কর্মীদের সামনে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী ইতিহাস তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জানান, সবাই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভাষণ শুনুন। দেশের মানুষের জন্য কীভাবে আত্মত্যাগ করতে করতে হয় তা বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে শেখা যায়। এবং তিনিই একমাত্র নেতা, যিনি দলের জন্য মন্ত্রীত্ব ছাড়তে দ্বিধা করেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু কাজ করেছেন। কিন্তু পাকিস্তান হওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য স্বাধীনতা দরকার। ১৯৪৮ সালে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন থেকে ১৯৭০ এর নির্বাচন পর্যন্ত এ লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বারবার গ্রেফতার হয়েও তাকে দমানো যায়নি। স্বাধীনতা আদায়ের সংগ্রাম থেকে একচুল নড়ানো সম্ভব হয়নি।
এসময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরেই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজও শুরু করেন। কিন্তু এদেশের কিছু ষড়যন্ত্রকারী বিদেশি মিত্রদের সহায়তায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। তা না হলে পরবর্তী পাঁচ বছরেই ক্ষুদা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ পাওয়া সম্ভব ছিল বলে শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, মাত্র অল্প সময়ে তিনি যা করেছেন তা গবেষণার বিষয়। এখন কাজ করার সময় অবাক হতে হয় কীভাবে এত অল্প সময়ে তিনি এত আইন তৈরি করেছেন। কীভাবে অন্যান্য দেশের সাথে সুসম্পর্ক তৈরিতে কাজ করেছেন।
বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় করোনা প্রভাব ফেলেছে। তারপরও মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের প্রতিটি গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৬ হাজার পরিবারের জন্য ঘর বরাদ্দ হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় খোঁজখবর করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, কারও ঘর না থাকলে তাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে এটাই হবে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সবার প্রত্যয়।