যশোরে লাগামহীন চাল ও তেলের বাজার। কোনভাবেই এ দুটি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। বাজারে গিয়ে চাল ও তেল কিনতে গিয়েই মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। গত এক বছরে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। আর ভোজ্য তেল সয়াবিনের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২৪ টাকা। চাল ও তেলের ধারাবাহিক দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে পারছে না মানুষ। আর এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং কমিটির।
মঙ্গলবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এসব মালামালের দাম শুনেই মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। দিশেহারা মানুষ বাজারে গিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছেন। তারা একটু কম দামের আশায় দোকানের পর দোকানে গিয়ে মূল্য যাচাই করছেন। অথচ সরকার চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানী শুল্কহার কমিয়ে দিয়েছেন। আশা করেছিলেন কম শুল্কে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চাল আমদানী করে বাজারে ছাড়লে দাম কমতে পারে। কিন্তু সরকারের সে কৌশল কোন কাজে আসেনি। চালের দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। আর অস্থির হয়ে উঠেছে সয়াবিন তেলের বাজার।
যশোর বড় বাজারের হাট চান্নির চাল ব্যবসায়ী উত্তম ভান্ডারের মালিক উত্তম কুমার জানান, গরীব মানুষের জীবন বাঁচানোর মোটা স্বর্ণা চাল বর্তমানে খুচরো বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। অথচ গত বছরের জানুয়ারিতে এ চাল বিক্রি হয়েছে ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা কেজি। এছাড়া, ধণি শ্রেণির মানুষের খাবারের চাল বাসমতি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায়। গত বছর এ চালের প্রতি কেজি ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। মিনিকেট চালের প্রতি কেজি ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা। গত বছরে এ চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। কাজল লতা বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি। গত বছরে এ চালের দাম ছিল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা। বি-আর-২৮ মানের চালের প্রতি কেজি ৫১ থেকে ৫৩ টাকা। গত বছরে এ চালের দাম ছিল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা। খুচরো ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তারা যে দামে চাল কিনছেন, সে হিসেবেই বিক্রি করছেন। দাম বৃদ্ধির কারণ তাদের জানা নেই। এমনকি দাম বৃদ্ধি করার ক্ষমতাও তাদের নেই। পাইকার ও অটো রাইসমিল মালিকরা তাদেরকে যে মূল্য বেধে দেয়, সে হিসেবেই তারা বিক্র করেন।
এদিকে, এক বছরের ব্যবধানে চালের বিপুল পরিমান এ দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে পারছে না মানুষ। তারা দোকানে গিয়ে ব্যবসায়ীর হাঁকা দরেই চাল কিনে বাড়ি ফিরছেন। ধারাবাহিকভাবে চালের মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে কুষ্টিয়া কেন্দ্রিক অটো রাইসমিল সিন্ডিকেট জড়িত বলে ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানিয়েছে। তারা বলেছেন, অটো রাইসমিল মালিকরা চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের বেধে দেয়া দামেই চাল বিক্রি করতে হয়। নতুবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তারা মিল থেকে চাল সরবরাহ করেন না।
এদিকে, দেশে ভোজ্য তেলের বাজারেও অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চলেছে তেলের দাম। এখানেও মানুষ অসহায়, তাদেরকে বেশি দামেই তেল কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি খোলা সোয়াবিন (ব্যারেলের) তেল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২২ টাকা। গত বছরের জানুয়ারিতে এর কেজি ছিল ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা। সুপার সয়াবিন তেল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকা। গত বছরে কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯২ টাকা। পামওয়েল ১০৬ থেকে ১০৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ছিল ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। এছাড়া কন্টেইনারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা ও ৫ লিটারের মূল্য ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এ তেল গত বছরে লিটার ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা ও ৫ লিটার ছিল ৪৬০ থেকে ৫০০ টাকা। বাজারে চাল ও তেলের মূল্য লাগামহীন হলেও নিয়ন্ত্রণে জেলা বাজার মনিটরিং কমিটির কোন পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমেই এ কমিটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে সাধারণ মানুষ অভিযোগে জানিয়েছে।
শহরের হাটখোলা সড়কের দু’জন পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে দেশের দুটি বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বেশিদামে সিঙ্গাপুর থেকে তেল আমদানী করছেন। অথচ এক সময়ে এ বাজার ছিল মালয়েশিয়ায়। তখন বিশ্বে সোয়াবিন তেলের এতো চাহিদা ছিল না। বর্তমানে এ ব্যবসা চীন নিয়ন্ত্রণ করায় ও চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোরের বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করা হয়ে থাকে। এসব বৈঠকে অযৌক্তিকভাবে মুনাফা আদায় না করার জন্য ব্যবসায়ীদের আহবান জানানো হয়।