খুলনার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা দাকোপ আর সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকায় এখন এক চরম আতঙ্কের নাম আসাদুজ্জামান জামাল। আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী হয়েও সে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে।
প্রতারনা আর অবৈধ তদবির করাই যারা প্রধান পেশা। গ্রামবাসি এবং আশেপাশের লোকজনের সংগে অব্যাহত প্রতারণা করায় পাচ বছর আগে নিজের জন্মভুমি দাকোপের পানখালী ইউনিয়নের হোগলাবুনিয়া গ্রাম থেকে গনপিটুনী খেয়ে বিতারিত হয়েছেন। এখন রাজধানি ঢাকায় ঘাটি গেড়ে খুলনা, সাতক্ষীরা বাগেরহাট এলাকায় তৈরী করেছেন একটি বিশাল প্রতারক চক্র।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শুরু করেন প্রতারণা। এলাকায় একাধিকবার পিটুনী খেয়েছেন। ২০০১ সালে খুলনা-১ আসন (দাকোপ-বটিয়াঘাটা ) সংসদ নির্বাচন করে সর্বপ্রথম আলোচনায় আসেন। পেয়েছিলেন ৬০ ভোট। তার পর থেকেই তার প্রতারনা শুরু হয় নতুন মাত্রায়। এরপর অংশ নেন ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলাসহ বেশ কয়েকটিতে। প্রতিবার একই ফল আসে। তবে নির্বাচনের অংশ নেয়ার কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং প্রশাসনের উচচ পর্যায় মেলামেশার সুবাদে এলাকায় নিজেকে নতুন ভাবে জাহির করতে থাকেন। এখন নিজেকে পরিচয় দেন বঙ্গবন্ধু পবিত্র ঈদ উল আযহা গবেষনা পরিষদ নামে একটি ভুয়া সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং সাবেক ৮ ম জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী খুলনা-১ হিসেবে।
খুলনা সাতক্ষীরা বাগেরহাট জেলায় কিছু আত্মীয়স্বজন এবং নিজস্ব কিছু লোকজন দিয়ে তৈরী করেছেন এক বিশাল প্রতারক চক্র। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পেছনে থেকে তাদের মদদ দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু রাজনীতিবিদ। রয়েছে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ইন্ধন।
খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় জালালের প্রতারনা ও ভুয়া তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করায় একাধিক মানুষ বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন সময়ে হয়রানীর শিকার হয়েছেন। দাকোপের পানখালী এলাকার ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান মিল্টনের বাসার ফ্রিজে হরিনের মাংশ আছে। এমন ভুয়া তথ্য দেয় বনবিভাগকে। তার বাসায় অস্ত্র আছে এমন ভুয়া তথ্য দেয় জেলা পুলিশ ও র্যাবকে। এসব তথ্য পেয়ে সাথে সাথে অভিযানে যায় বনবিভাগ র্যাব এবং পুলিশ । ঘটনা স্থলে যেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো টের পায় তারা ভুয়া তথ্য পেয়েছে। যে মোবাইল দিয়ে এমন ভুয়া তথ্য দেয় সাথে সাথে সেই মোবাইল নম্বর করে দেয় বন্ধ করে দেয়। দাকোপ এলাকার সাংবাদিক শিপন ভুইয়া, আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং মোজাফ্ফরের নামেও সে আদালতে এর আগে ছিনতাই এবং ভুয়া চাদাবাজীর মামলা করেছে।
পাচবছর আগে সে ভুয়া চেক দিয়ে গরু এনে সে খুলনা প্রেসক্লাবে একটি দাকোপে একটি এবং বটিয়াঘাটায় একটি গরু বঙ্গবন্ধুর নামে গরু কোরবানী দিয়ে ব্যাপারীদের টাকা না দিয়ে সে পালিয়ে যায়। ঢাকায় গিয়েও সে একই ধরনের কারাবার করছে। করোনার আগষ্ট মাসের দিকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে দায়িত্বরত পুলিশদের একটি করে কালোজিরা প্যাকেট বিতরণ করেন।
দাকোপ উপজেলার পানখালী ইউনিয়নের খোনা গ্রামের মেম্বার সাহাবুদ্দিন জানান, জালালের নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তার নামে বনদস্যুতার অভিযোগ তুলে জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কমকর্তাকে ভুল তথ্য দেয়। আসাদের দেয়া ভুল তথ্যে জেলা পুলিশ তাকে আটকও করে । তবে অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় তাকে মুক্তি দেয়। তবে হয়রানী যা হওয়ার হয়েছেন তিনি। এর পরে আদালতে জালালের চাচা শশুরকে দিয়ে সে কয়েকটি ভিত্তিহীন মামলা দেয় সাহাবুদ্দিনের নামে। ভুয়া মামলায় তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।
আমন মৌসুমে ধানকাটার সময়ে পানখালী এলকার হাসান ফকিরের জমির মালিকা দাবী করে অর্ধেক ধান এবং জমি দাবী করে। তিনি অস্বীকার করলে তাকেও জালাল জড়িয়ে দেয় একটি মিথ্যা মামলায়। পানখালী গ্রামের ধনাঢ্য পরিবার ফেরদৌসিদের। সেও জালালের জালিয়াতিতে অতিষ্ঠ। আমন মৌসুমে ধানকাটার সময়ে প্রতিবার জালাল বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে তাদের জমির ধান কেটে নিতে চায়। এছাড়াও চালনা এলাকার জাহিদ, জাহাঙ্গিরসহ একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে জালালের রোষানলে পরে প্রতারণা ও হয়রানীর শিকার হয়েছেন।
খুলনা জেলা প্রশাসক, খুলনা জেলা পুলিশ সুপারসহ অনেক পদস্থ কর্মকর্তাকে জালাল আসাদ নামে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলছি পরিচয়ে। এছাড়া সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের ফোন দেন সংসদ সদস্য শেখ জুয়েলের বন্ধু কখনোবা সংসদ সদস্য শেখ তম্ময়ের বন্ধু আসাদ পরিচয়ে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম , পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ হোসেন, ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ, দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু বিশ্বাস এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে আসাদ পরিচয়ে একজন তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলছি পরিচয় দিয়ে ফোন করেন। বিভিন্ন তদবির করেন। না শুনলে উর্ধতন কর্মকর্তাদের পরিচয় দিয়ে তাকে দেখিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। তবে তার কথাতেই সন্দেহ হওয়ায় তারা বিষয়টি ওভাবে আমলে নেননি।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে গনমাধ্যম কর্মীরা প্রতারক আসাদুজ্জামান জালালের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৃথক তিনটি প্রতারনা মামলায় গ্রেপ্তারী পরওয়ানা রয়েছে আসাদুজ্জামান জালালের। একটি মামলায় তিন বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী সে। জালালকে গ্রেপ্তারে পুলিশ চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্তা কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী। তিনি বলেন, ওয়ারেন্টে জালালের দাকোপের হোগলা বুনিয়া লেখা থাকলেও সেখানে তার কোন পৈত্রিক সম্পতি বা বসতবাড়ি বলতে কিছু নেই। সে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাছাড়া। তবু বিভিন্ন স্থানে তার খোজ চলছে।