পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, হে যারা ঈমান এনেছো! যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা মজলিসে জায়গা ফাঁকা রেখে বসো’ তখন তোমরা জায়গা ফাঁকা রেখে বসবে, আল্লাহ তোমাদেরকে প্রশস্ততা দান করবেন। আর যখন বলা হয় ‘তোমরা উঠো’ তখন তোমরা উঠে পড়ো, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছো এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদেরকে আল্লাহ মর্যাদাসমূহে সমুন্নত ও সম্মানিত করবেন। আর তোমরা যে কর্মই করো, তার সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ খবর রাখেন।’ (সুরা মুজাদিলা, আয়াত: ১১)
হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত আবু মুসা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন: আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান ও হেদায়াতসহ প্রেরণ করেছেন তার উপমা বারিধারার ন্যায় যা একটি জমির ওপর বর্ষিত হয়েছে।
তার একটি অংশ ভালো যা পানিকে গ্রহণ করে নিয়েছে। ফলে তা বিপুল পরিমাণ ঘাস ও গাছ উৎপন্ন করেছে। এর একটা অংশ ছিল নিচু, সেখানে তা পানি আটকিয়ে নিয়েছে, আর তা থেকে আল্লাহ লোকদেরকে উপকৃত করেছেন, তা থেকে তারা পান করেছে, জীবজন্তুকে পান করিয়েছে এবং পানি সেচ করে কৃষি কাজও করেছে।
আবার এই বারিধারা এমন এক অংশে পৌঁছেছে যেটি ছিল অনুর্বর, সমতল ময়দান। তা পানি ধরে রাখতে পারেনি এবং তার ঘাস উৎপন্ন করার ক্ষমতাও নেই। প্রথমটি হচ্ছে ওই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত, যে আল্লাহর দীনের জ্ঞান লাভ করেছে এবং আল্লাহ যে জ্ঞান দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছেন তা থেকে সে লাভবান হয়েছে।
কাজেই সে তা শিখেছে ও অন্যকে শিখিয়েছে। অপর দৃষ্টান্তটি হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির, যে এই জ্ঞানের দিকে দৃষ্টি দেয়নি এবং আল্লাহ আমাকে যে হেদায়াতসহ পাঠিয়েছেন তা গ্রহণ করেনি।’ (বোখারি)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা আলেমদের প্রশংসা করেছেন এবং জানিয়েছেন যে, এ জ্ঞান খোদাপ্রদত্ত। যারা এই জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন তিনি তাদের মর্যাদা উন্নীত করেছেন।
উল্লিখিত হাদিসটিতে আল্লাহর রাসুল (সা.) তিন ধরনের জ্ঞানী ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন।
প্রথম দুই দল আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান লাভ করে লাভবান হয়েছে। তাদের একদল জ্ঞান অর্জন করে নিজেদের সংশোধন করেছেন কিন্তু সাধারণ মানুষের সংশোধনের প্রতি দৃষ্টিপাত করেননি।
দ্বিতীয় দলটি জ্ঞান দ্বারা নিজেরা লাভবান হবার সাথে সাথে অন্যদেরকে উপকৃত করেছেন। উদাহরণস্বরূপ এ উম্মতের বুযুর্গানে দীন।
আর তৃতীয় দল হলো তারা, যারা জ্ঞান পেয়েও নিজেদের সংশোধন করেনি ও তা থেকে উপকৃতও হয়নি।
আজ আমাদের ধর্মীয় সমাজে ওই তৃতীয় শ্রেণির জ্ঞানীদের সংখ্যাই মনে হয় বেশি। তারা ধর্মের জ্ঞানকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ধর্মে মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে, ধর্মে নতুন রীতিনীতি প্রবেশ ঘটিয়েছে এবং ধর্মের নামে নানান অপকর্মও করে বসে।
কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা করে মানুষের মাঝে ফিতনা ও ফাসাদ এবং ঐক্যের তান ছিঁড়ে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দিচ্ছে। যদিও এই সংখ্যাটা বেশি নয় কিন্তু গুটিকতক লোকদের জন্য সমাজের একটি বড় অংশকে এর মাশুলও দিতে হয়।
আগে ওয়াজ মাহফিল থেকে ধর্মীয় কত সুন্দর সুন্দর বয়ান শুনে ঘরে ফিরতাম কিন্তু এখন কি হচ্ছে? কেন জানি এখন আর ধর্মীয় বয়ানগুলোতে সেই আধ্যাত্মিক তৃপ্তি লাভ করি না।
যুব সমাজ আজ নানান অপকর্মে লিপ্ত, নেশায় মত্ত হয়ে পিতামাতাকেও খুন করছে। প্রতিনিয়ত পারিবারিক কলহে কত সুখের ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে।
তাই যুব সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার জন্য এবং পরিবারগুলোকে শান্তিময় করার লক্ষ্যে একজন আলেম অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
তাই যারা সমাজ সংস্কারের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের কাছে আমার বিনীত নিবেদন, আসুন আমরা আমাদের যুবকদেরকে রক্ষা করি এবং পরিবারগুলোকে শান্তিময় করার লক্ষ্যে কাজ করি।
শেষে এটাই বলব, যার যেভাবে সুযোগ আছে পরিবার ও সমাজকে নিয়ে একটু ভাবি। একটি সন্তানও যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি দেই।
এ লক্ষ্যে আমাদেরকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা আমাদের ওয়াজ-নসীহতে এবং জুমার খুতবায় তুলে ধরতে হবে।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা প্রচারের তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট