খুলনার রূপসার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বে অবহেলা, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দফায় দফায় দীর্ঘ মেয়াদী ছুটি, স্থানীয় এমপি ও উপজেলা প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ সভায় অনুপস্থিত থাকা, নিয়মিত অফিস না করা, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অধিকাংশ সময় না থাকায় উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা হুমকির মুখে পড়েছে।
উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগের পরে সিভিল সার্জন তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। জবাবে পারিবারিক জরুরী কাজে উপস্থিত হতে পারেননি এবং ভবিষ্যতে এমনটি করবেন না বলে অঙ্গিকার করেছেন তিনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডা. আনিসুর রহমান রূপসা উপজেলায় গত বছরের এপ্রিলে যোগদান করার পর থেকে এক ধরনের অভিভাবক শূন্যতায় ভুগছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। অধিকাংশ সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দফায় দফায় টানা ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত ছুটি কাটিয়েছেন। এছাড়া তিনি একশ’ কিলোমিটারের অধিক দূরবর্তী সাতক্ষীরার শ্যামনগরস্থ নিজবাড়ি থেকে প্রাইভেটকার যোগে অফিসে আসেন, আবার একই দূরত্ব অতিক্রম করে বাসায় ফেরার কারণে মাঝে মধ্যে যেদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন সেদিনও বেশিক্ষণ তাকে অবস্থান করতে দেখা যায় না। গেল মাসে ২ থেকে ৩ দিন এ প্রতিবেদক সরেজমিন যেয়েও তার স্বাক্ষাত পাননি। উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধানের সরেজমিন সন্তোষজনক উপস্থিতি না থাকায় সিদ্ধান্তহীনতায়ও অনেক কাজ পিছিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কার্যক্রমে স্বেচ্ছাচারিতা এবং অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া কোভিড-১৯ প্রথম ফেজ প্রতিরোধেও মাঠ পর্যায়ে তার দেখা মেলেনি। অফিসিয়ালিও উল্লেখযোগ্য কাজ করতে দেখা যায়নি। অধিকাংশ সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও থাকতেন না তিনি। তাছাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও যথাযথ পরিদর্শনে যান না তিনি।
এদিকে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধ বিষয়কসহ উপজেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ তিনি দীর্ঘদিন উপস্থিত থাকছেন না। এমনকি ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা থাকলেও তিনি যুক্ত থাকেন না। এ বিষয়ে মৌখিকভাবে তাগাদা দিয়ে সাড়া না পাওয়ায় একপর্যায়ে জানুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তার। পরে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ ওই টিএইচওকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান। নোটিশের জবাবে ডা. আনিসুর রহমান পারিবারিক জরুরী কাজে উপস্থিত হতে পারেন নাই এবং ভবিষ্যতে মিটিং এ উপস্থিত থাকবেন বলে অঙ্গিকার করেছেন, এমনটি জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খুলনা গেজেটকে আরও বলেন, আমি যোগদানের পূর্বে তিনি কি করেছেন সেটা জানি না। আমি জানার পরে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছি। আমি আসার পরেও তিনি কয়েকবার ২/৩ দিনের ছুটি নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় রাত্রিযাপন না করে একশ’ কিলোমিটারের অধিক দূরত্ব থেকে অফিসে আসা যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নাই। এ ব্যাপারে জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান বলেন, আমি উপজেলার ২টি মিটিং এ যুক্ত ছিলাম। পরে ট্রেনিংয়ে যাওয়া ও অসুস্থতায় দীর্ঘদিন ছুটি কাটানোয় মিটিং এ যোগদান করতে পারি নাই। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিসের মিটিং ও উপজেলার মিটিং একই সময়ে পড়ার কারণেও তিনি মিটিং-এ উপস্থিত হতে পারেন নাই বলেও জানান।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তার বলেন, আমরা মিটিং-এ ডাকলেও তিনি আসেন না। সবসময় তার প্রতিনিধি পাঠান। ফলে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ও যথাযথ বাস্তবায়নে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। কোভিড-১৯ প্রতিরোধেও কার্যকারী ভূমিকায় তাকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শিদী বলেন, যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবায় অবদান রাখবে এটাই প্রত্যাশা। তবে উনি কাজে আন্তরিক বলে আমার মনে হয় না। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, উপজেলাতে আমার উপস্থিতিতেও কোন মিটিংয়ে তাকে পাইনা। এছাড়া ভার্সুয়াল মিটিংয়েও যুক্ত হন না, যেখানে অন্যান্য দপ্তর প্রধানরা যুক্ত থাকেন।