যশোরের মণিরামপুরে মোটরসাইকেল ছিনতাই চেষ্টার অপবাদে প্রকাশ্য দিবালোকে বোরহান হোসেন নামে এক কলেজ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে মণিরামপুর থানায় মামলা করার পর পুলিশ একজনকে আটক করেছে। উপজেলার খালিয়া গ্রামের ব্র্যাকের ডিপ নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, পৌর এলাকার হাসপাতাল মোড় মোহনপুর গ্রামের ট্রেকার চালক আহসানুল কবীরের পুত্র বোরহান মণিরামপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। মহামারী করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় নিজের লেখা-পড়ার খরচ যোগাতে বোরহান পৌর শহরের একাউন্টিং কোচিং সেন্টারে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করে। নিহতের পরিবারের দাবী সম্প্রতি সে অনেকটা মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে ভুল চলাফেরা করতে থাকে।
গত শনিবার ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে বোরহান পৌর শহর থেকে একটি বাইসাইকেল চালিয়ে খালিয়া গ্রামের পাশ্ববর্তী সাগরা সড়কে যায়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বোরহান নাকি নাঈম নামে এক যুবকের নিকট থেকে মোটরসাইকেলের চাবি কেঁড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। পরে সে তার বাইসাইকেল চালিয়ে চলে আসার সময় ব্র্যাকের ডিপ এলাকায় আসলে ধর ধর মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী প্রচার চালিয়ে নাঈমসহ কয়েকজন তাকে ধরে নিয়ে দফায় দফায় গণপিটুনি দিতে থাকে।
খবর পেয়ে পাশ্ববর্তী রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এসময় তার অবস্থার অবণতি দেখে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে যশোরে রেফার করেন। সেখানেও তার অবস্থার অবণতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়।
রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে ঢাকায় পৌঁছানোর পরপরই তার মৃত্যু ঘটে বলে নিশ্চিত করেন, নিহতের চাচা রিকন হোসেন।
এদিকে, সন্তানকে হারিয়ে পিতা-মাতা প্রায় বাকরুদ্ধ হওয়ায় তাদের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে, নিহত কলেজ ছাত্র বোরহানের অপর এক চাচা কাজল হোসেন জানান, কিছুদিন আগে সে অনেকটা মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে ভুল চলাচল করছিল। রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শাহাজান হোসেন জানান, কলেজ ছাত্র বোরহানকে বেদম মারপিটের অভিযোগ এনে তার পিতা আহসানুল কবীর বাদী হয়ে প্রথমে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু মারপিটে তার মৃত্যুর পর উক্ত অভিযোগ বর্তমানে হত্যা মামলায় পরিণত হয়েছে।
পুলিশ জানায়, কলেজ ছাত্র বোরহানকে হত্যার ঘটনায় উপজেলার কৃষ্ণবাটি গ্রামের নূর ইসলামের পুত্র নাঈম হোসেনকে আটক করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, মোটরসাইকেল ছিনতাইকারীকে ধর এমন চিৎকারকারী নাঈমের সাথে যোগ হয়ে আরো অনেকেই কলেজ ছাত্র বোরহানকে দফায় দফায় মারপিট করেছে।
মারপিটের ঘটনায় আটক নাইমকে আসামি করে শনিবার রাতে মণিরামপুর থানায় মামলা করেন বোরহানের বাবা। সেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই তপনকুমার নন্দী।
তপন নন্দী বলেন, উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয় বোরহানকে। পরে তাকে মণিরামপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে, রোববার সকালে বোরহানের লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।