দেশের অন্যতম জামায়ত-শিবির অধ্যুষিত জেলা সাতক্ষীরা। ২০১৩ সালে ইস্যুবিহীন সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে ব্যাপক নাশকতা চালায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জামায়ত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা। সহিংসতাকালীন জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো দেবহাটাতেও জামায়ত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন তৎকালীন উপজেলার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রভাবশালী নেতা আবু রায়হান, জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি আলমগীর হোসেন বাকুম এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ। সশস্ত্র হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের অপর সাংগঠনিক সম্পাদক ও সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতনসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী ও সমর্থক। ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান ও সহ-সভাপতি শরৎচন্দ্র ঘোষসহ অসংখ্য আওয়ামী নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আজোও দেবহাটা উপজেলাবাসীর মনে দুঃস্বপ্নের মতো দাগ কেটে রয়েছে ২০১৩-১৪ সালের সহিংসতা কালীন অবর্ণনীয় তান্ডবের সেই দিনগুলি। পরবর্তীতে সহিংসতায় নেতৃত্ব দেয়া জামায়ত-শিবিরের সেই সশস্ত্র ক্যাডাররা বিভিন্ন মামলার আসামী হয়ে আত্মগোপনে থাকলেও সম্প্রতি আবারো ঘরমুখো হয়েছেন অধিকাংশরাই। গেল উপজেলা পরিষদের উপ নির্বাচনে নৌকার পরাজয় ঘটাতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিল তারা। তাতে ব্যর্থ হলেও, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তারা আটঘাট বেধে মাঠে নামার পায়তারা করছে। সেজন্য ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে জামায়তের শীর্ষ নেতারা এখন সুযোগ খুজছেন মাহফিল ও ইসলামী কনসার্টের নামে দীর্ঘদিন আত্মগোপনের থাকা এসব সশস্ত্র ক্যাডারদের সুসংগঠিত করতে। সরকার বিরোধী আন্দোলনকে জোরদার এবং আগামী নির্বাচনে নৌকার পরাজয় ঘটাতে জামায়ত-শিবিরের নেতাকর্মীদের একত্রিত করার দায়িত্ব নিয়েছেন একসময়ের অস্ত্রধারী ও আলোচিত দূর্ঘর্ষ শিবির ক্যাডার । সেবামুলোক কর্মকান্ডের নামে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে সেখান থেকেই জামায়ত শিবিরের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। উপজেলা জামায়ত অফিসের বিপরীতে অবস্থিত একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের ঘরেই জামায়তের শীর্ষ নেতাদের সাথে করছেন গোপন বৈঠকও। মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে যেখানে স্কুল কলেজ এখনো বন্ধ রেখেছেন সরকার, ঠিক তখনই জামায়ত শিবিরের পলাতক সশস্ত্র ক্যাডারদের একত্রিত করতে ঐ শিবির ক্যাডার পারুলিয়া ফুটবল মাঠে আয়োজন করছেন দু’দিন ব্যাপী মাহফিল ও ইসলামী কনসার্ট। উপজেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে ইতোমধ্যেই মাহফিলের নামে চাঁদাবাজিসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে আত্মগোপনে থাকা জামায়ত শিবিরের নেতাকর্মীদের মাহফিলে জড়ো হওয়ার দাওয়াত দিচ্ছেন। এমনকি প্রশাসনিক বাধা উপেক্ষা করতে অনুমতি না নিয়েই উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিসহ একাধিক আওয়ামী নেতৃবৃন্দের নাম ব্যবহার করেছেন অতিথির তালিকায়। এ মাহফিলের অর্থদাতাদের নামের স্থলে রয়েছেন রাফসান গ্রুপের মালিক আবু হাসান ও ভোমরার খালিদ হোসেন শান্ত।
বুধবার উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ মাহফিলটির বিষয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। সভায় ব্যাপক আলোচনা শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান বলেন, একদিকে করোনা ভাইরাস ও অন্যদিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের অনুমতি ছাড়া এধরনের কোনো মাহফিল হতে দেয়া হবেনা। তাছাড়া মাহফিলে নাম করে যদি চাঁদাবাজি সংঘটিত হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালে একইভাবে জামায়ত শিবিরের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের একত্রিত করে একই স্থানে আয়োজিত ঐ শিবির ক্যাডার এই মাহফিলে সরকার বিরোধী উষ্কানী মুলোক বক্তব্য দেয়ার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির সাথে জামায়ত-শিবিরের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে দেবহাটা ও সাতক্ষীরা থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। পন্ড হয়ে যায় মাহফিলটি এবং পালিয়ে যান উষ্কানী মুলোক বক্তব্য দেয়া সেই বক্তাও। ২০১৯ সালে একই মাহফিলের নামে প্রায় দশ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করে পরে মাহফিলটি না করে চাঁদাবাজিকৃত সমুদয় টাকা আত্মসাত করেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ছাত্রশিবিরের নেতৃত্ব দেয়ার সময় গণধোলাইয়ের শিকার হন তিনি। পরে হয়ে ওঠেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ত্রধারী শিবির ক্যাডার। একপর্যায়ে সেখান থেকেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পালিয়ে দেবহাটাতে চলে এসে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে দেদারছে নিয়ন্ত্রন করছেন সরকার বিরোধী জামায়ত-শিবিরের গোপন পরিকল্পনা। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সমুহ সম্ভাবনা থাকায় দুদিন ব্যাপী ওই মাহফিল ও ইসলামী কনসার্টের অনুমতি দেয়ার আগে গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকল শ্রেনি পেশার মানুষ।