বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসির হোসেন সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। তার বিয়ে নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক ইস্যুতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান তিনি। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রমাণ স্বরূপ নাসিরের স্ত্রী তামিমা সুলতানা প্রথম বিয়ের তালাকের কাগজ প্রকাশ করেন।
কেবিন ক্রু তামিমা সুলতানা তাম্মিকে সম্প্রতি নাসির হোসেন বিয়ের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে বিতর্ক। কারণ নাসিরের স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মি আগে বিবাহিত ছিলেন।
তামিমা আগের স্বামীকে তালাক না দিয়েই নাকি নাসিরকে বিয়ে করেছেন। এ অভিযোগ এনে উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন তামিমার আগের স্বামী রাকিব হাসান।
ডিভোর্স পেপার ছাড়াই অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তামিমার সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলার খবরটি প্রকাশ্যে আসতে না আসতেই স্ত্রীকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ক্রিকেটার নাসির। সেখানেই এই তালাকনামা প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নাসির ও তামিমা দাবি করেন, তারা দেশের আইন ও ধর্মীয় বিধান মেনে বিয়ে করেছেন। রাকিবের সঙ্গে তামিমার বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর আগে। ২০১৬ সালে তামিমা ডিভোর্সের আবেদন করেন এবং ২০১৭ সালে ডিভোর্স হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নাসির বলেন, এতোদিন ও শুধু তামিমা ছিলো, আজকে থেকে তামিমা হোসেন। আমি চাইব না কেউ কোনোভাবে ওর বিরুদ্ধে কিছু বলুক। যারাই যেখান থেকে কিছু বলবে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
এর আগে বুধবার ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বামী মো. রাকিব হাসান। মামলায় আগের বিয়ে গোপন রেখে নতুন বিয়ে, অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া, ব্যাভিচার ও মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে রাকিব হাসান এ মামলা করেন।
রাকিবের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, মামলায় তামিমা সুলতানা তাম্মিকে এক নম্বর ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৯৪, ৪৯৭, ৪৯৮, ৫০০ এবং ৩৪ ধারায় এ মামলা করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদীর সঙ্গে ১ নম্বর আসামি তামিমা সুলতানার ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ৩,০০,০০১ (তিন লক্ষ এক) টাকা দেনমোহর ধার্যে বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং রেজিস্ট্রি হয়। বিয়ের পর থেকে বাদী ও ১ নম্বর আসামি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করতে থাকেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের সংসারে বাদীর ঔরসে ১নং আসামির গর্ভে একজন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়, যার নাম রাখা হয় তোবা হাসান। বয়স-৮ বছর। ১ নম্বর আসামি (তাম্মি) পেশায় একজন কেবিন ক্রু। তিনি সৌদি এয়ারলাইন্সে কর্মরত। চাকরির সুবাদে তিনি গত ১০ মার্চ সৌদিতে গিয়েছিলেন। করোনা মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন।
উল্লেখ্য, গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেছেন ক্রিকেটার নাসির হোসেন। বিয়েকে স্মরণীয় করতে ভালোবাসা দিবসটিকেই বেছে নেন তিনি। কিন্তু বিয়ের সপ্তাহ পার না হতেই চরম বিতর্ক শুরু হয়েছে।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নাসিরের স্ত্রীকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য বেরিয়ে আসে। সকাল থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তামিমার আরেক স্বামী ও সন্তানের ছবি। রাকিব নামে ওই স্বামীর সঙ্গে তার বিয়ে হয় ১১ বছর আগে। সেই ঘরে কন্যা সন্তানের বয়স এখন নয় বছর।
নাসিরের সঙ্গে বিয়ের ভিডিও ও খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় এ জিডিটি করেন বলে নিশ্চিত করেন উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস।
জিডিতে রাকিব উল্লেখ করেন, তামিমার সঙ্গে এখনো তার ডিভোর্স হয়নি। ডিভোর্স ছাড়া স্ত্রী কিভাবে অন্যের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন সেই প্রশ্ন তার। এজন্য স্ত্রীর বিরুদ্ধে জিডি করেছেন তিনি।
পরে জিডির কপি ও তাদের বিয়ের কাবিননামাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জিডিতে রাকিব অভিযোগ করেছেন, তার সঙ্গে সংসার করা অবস্থায় তামিমা গোপনে আরেকজনকে বিয়ে করেন। সেখানে ছয়মাস সংসারও করেন।
জিডি সূত্রে আরো জানা যায়, তামিমা ছয় মাস যে ছেলের সঙ্গে সংসার করেছেন ওই ছেলের নাম অলক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি অডিও ক্লিপে এই ছেলের বিষয়েই নাসির ও রাকিবের মধ্যে কথোপকথনও শোনা যায়।
শনিবার রাকিব তামিমা ও তার সম্পর্কের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, তামিমাকে তিনি দু’বার বিয়ে করেছেন। অর্থাৎ তামিমার জীবনে তিন স্বামী (নাসির হোসেন, অলোক ও রাকিব) এলেও বিয়ে করেছেন চারবার।
রাকিব বলেন, প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। সে আসলে আমাকে চাপ দিয়েই বিয়ে করেছিল। প্রথমে আমরা টাঙ্গাইলে কোর্ট ম্যারেজ করেছিলাম। পরে আমরা বিয়ে করি বরিশালে। আমার বউকেই দু’বার বিয়ে করেছি। এরপর সংসার শুরু করি।’
এদিকে, রাকিব ও নাসিরের ফোন রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে রাকিবকে ফোন করে জিডি করার ব্যাপারটি ধামাচাপা দিতে বলেন নাসির।
কথোপথনে রাকিবের প্রশ্ন ছিলো, আপনি কি তামিমা সম্পর্ক সব কিছু জানেন? উত্তরে নাসির হোসেন বলেন, তার সব কিছু জেনেশুনেই আমি তাকে বিয়ে করেছি। তার বাচ্চা আছে, তার আগেও বয়ফ্রেন্ড ছিলো সবকিছুই আমি জানি। আপনার বৌ আপনার সঙ্গে ভালো থাকলে নিশ্চয়ই আপনার ১১ বছরের সংসার ভেঙে আমার কাছে চলে আসতো না।
রাকিব হাসান ও তামিমার কাবিননামায় দেখা যায়, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিন লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে হয়। রাকিবের দাবি, গেলো ১১ বছরে তার স্ত্রীর পড়াশোনা থেকে শুরু করে জব সবক্ষেত্রেই তিনি সাহায্য করেছেন।