শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতে বাংলাদেশ সঠিক লক্ষ্যেই এগোচ্ছে বলে মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে করোনাকালে যেহেতু অপুষ্টিজনিত চাপের বিষয়টি দেশের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে বিরূপ ছায়া ফেলেছে, তাই শিশুদের জন্য খাদ্যে পুষ্টি নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের উন্নত পুষ্টির জন্য ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল (এইচকেআই) বাংলাদেশ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশের মানুষকে অপুষ্টি ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে গত তিন দশকের অধিক সময় ধরে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পুষ্টি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতার গতির সঙ্গে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। পুষ্টি পরিস্থিতি মোকাবিলার অন্যতম কার্যকর উপায় হচ্ছে দেশের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক কার্যক্রমের মাধ্যমে অসুরক্ষিত পরিবারগুলো এবং সমাজের অন্যান্য সদস্যের কাছে দ্রুত পৌঁছাতে হবে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, আগামী দিনে শহরে অপুষ্টি রোধ করতে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। এজন্য আমিষ জাতীয় খাদ্যের উৎপাদন ও ভোগ বাড়াতে গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে।
তিনি বলেন, এসডিজির টার্গেট অনুযায়ী খর্বকায় এবং ক্ষীণকায় শিশু হার হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে (যেমন: ২০২৫ সালের মধ্যে খর্বকায় শিশুর হার ২৫% এবং ক্ষীণকায় শিশু হার ১২%)। এরপরও এসডিজি লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
ন্যাশনাল ইনফরমেশন প্ল্যাটফর্ম ফর নিউট্রিশন (এনআইপিএন) ও হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনালের (এইচকেআই) গবেষণায় দেখা গেছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি খর্বকায় ও স্বল্প ওজনের শিশুর হার কমাতে ইতিবাচক প্রভাব রাখে। মাথাপিছু আয় ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা কমে শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। অন্যদিকে স্বল্প ওজনের শিশুর সংখ্যা কমাতে সহায়তা করে প্রায় শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ। তবে অপুষ্টির অন্যতম এ দুই সূচকের মান ১ শতাংশ হারে কমাতে হলে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
‘পলিসি কোশ্চেন ফর্মুলেশন ফর আন্ডারস্ট্যান্ডিং নিউট্রিশনাল ইস্যুজ অ্যান্ড ইন্টারভেনশন’ শীর্ষক খসড়া প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণায় ১৯৯৬ সাল থেকে অপুষ্টির প্রধান তিনটি সূচক খর্বকায় (স্টান্টিং), স্বল্প ওজন (আন্ডার ওয়েট) এবং ক্ষীণকায়ের (ওয়াস্টিং) গতি-প্রকৃতির সঙ্গে জাতীয় আয়ের সম্পর্ক পরিমাপ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে এনআইপিএনের সিনিয়র নীতি উপদেষ্টা এম আসাদুজ্জামান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, যদিও অপুষ্টি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তবুও কোনো সরকারি সংস্থাকে সামগ্রিকভাবে বিষয়টি দেখাশোনা করার জন্য অভিযুক্ত করা হয় না। কিছু সংস্থা কেবল আংশিকভাবে অপুষ্টিজনিত সমস্যাগুলো দেখে। এমনকি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও এ বিষয়ে দায়ী করা যায় না।
তিনি আরও যোগ করেন, বিশেষত খাদ্য উৎপাদনে সরকারি নীতিগুলো পুষ্টি সংবেদনশীল নয়। কিছু ক্ষেত্রে পুষ্টির বিষয়ে যথাযথ নির্দেশনার অভাব রয়েছে। আসাদুজ্জামান অর্থনৈতিক, লিঙ্গ এবং আচরণ পরিবর্তনের (বিসিসি) প্রতি বিশেষ জোর দিয়ে আরও একটি সামগ্রিক পদ্ধতির সঙ্গে প্রকল্পগুলো নকশা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ডাব্লুএইচ উইং) কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেছেন, স্টান্টিং ও অপচয় হ্রাস করতে সরকার দেশের পুষ্টি খাতে মোটা অংকের বিনিয়োগ করছে।