বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে বসবাস এবং সহমতের ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। বেসরকারি একটি কল সেন্টারের দুই কর্মীর একসঙ্গে বসবাস ও শারীরিক সম্পর্কের মামলার রায় ঘোষণার সময় এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
এমনকি বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেও তাকে ধর্ষণের পর্যায়ে ফেলা যাবে না বলে পর্যবেক্ষণে বলেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, একে অন্যকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করতেন একটি কল সেন্টারের দুই কর্মী। প্রায় ৫ বছর ধরে একসঙ্গে থাকার পর তাদের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয় এবং সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরবর্তীতে ওই যুবক অন্য এক তরুণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু কল সেন্টারের ওই তরুণী তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।
এই মামলার শুনানি হয়েছে ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি এ এস বোপান্না এবং ভি রামাসুব্রহ্মনীয়নের বেঞ্চে। বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া ঠিক নয়। আর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করা উচিত নয় কোনও নারীরও। দীর্ঘদিন ধরে একত্রে বসবাস এবং সহমতের ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ বলে চিহ্নিত করা যায় না।’
তরুণের আইনজীবী বিভা দত্ত মাখিজা আদালতে যুক্তি দেন, সহমতের ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ককে যদি ধর্ষণ হিসেবে ধরা হয় এবং তার জেরে কেউ গ্রেফতার হন তাহলে সেটা বিপজ্জনক প্রবণতা হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে, তরুণীর আইনজীবী আদিত্য বশিষ্ঠ পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, ওই তরুণ বিশ্বের সামনে ঘোষণা করেছেন তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকছেন এবং একটি মন্দিরে বিয়ে করেছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং তার মক্কেলকে শারীরিক নিগ্রহ ও আর্থিক শোষণ করেছেন।
প্রশ্ন-উত্তর শেষে ওই তরুণকে ৮ সপ্তাহের জন্য আগাম জামিন দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। ২০১৮ সালে এ ধরনের দু’টি মামলাতেও প্রায় একই পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
ওই দুই মামলায় বলা হয়েছিল, কোনও নারী স্বেচ্ছায় কোনও পুরুষের সঙ্গে একত্রে স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকলে সহমতের ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক এবং ধর্ষণের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন। ধর্ষণ এবং সহমতের ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্কের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। আনন্দবাজার।