ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুনে ১৫০টি মন্দিরে ‘অ-হিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ’ লেখা নির্দেশিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা করেছে হিন্দু যুবা বাহিনী নামে কট্টর হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠন। খবর ডয়েচে ভেলের।
কিছুদিন আগেই ভারতের উত্তরপ্রদেশে একটি মন্দিরে এক মুসলিম যুবক পানি খেয়েছিল বলে তাকে মারধর করা হয়েছিল। রাজ্যটির গাজিয়াবাদে অবস্থিত ওই দাসনাদেবী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হলেন নরসিংহানন্দ।
পুরোহিত নরসিংহানন্দের অনুগামীরা উত্তরাখণ্ডের রাজধানী শহর দেরাদুনের চাকার্তা রোড, শুদ্ধওয়ালা, প্রেম নগরসহ বিভিন্ন এলাকার ১৫০টি মন্দিরে এই নির্দেশিকা ঝুলিয়ে দিয়েছে। কোনো ‘অ-হিন্দু’ সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না।
হিন্দু যুবা বাহিনীর নেতা জিতু বান্ধোয়া জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডের সব মন্দিরে তারা এই নির্দেশিকা লাগিয়ে দেবেন। উত্তরাখণ্ডকে বলা হয় দেবতার আবাস। এখানে কেদারনাথ ও বদ্রীনাথসহ প্রচুর প্রসিদ্ধ হিন্দু দেবস্থান আছে। হরিদ্বার, ঋষিকেশকে তো মন্দিরনগরী বলা হয়। সেখানে এই ধরনের নির্দেশিকা এতদিন দেখা যায়নি।
জিতু জানিয়েছেন, গাজিয়াবাদের দাসনাদেবী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত নরসিংহানন্দের সমর্থনেই তারা এ কাজ করেছেন। তার অভিযোগ, দাসনার মন্দির নিয়ে বিএসপি-র বিধায়ক আসলাম চৌধুরী বলেছেন, ওই জায়গাটা তার পূর্বপুরুষের সম্পত্তি। তাই সেখান থেকে মুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ সংক্রান্ত নির্দেশিকা সরাতে হবে।
নরসিংহানন্দের সমর্থনে ও বিএসপি বিধায়কের কথার প্রতিবাদে তারা উত্তরাখণ্ডে নির্দেশিকা দেওয়া শুরু করেছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরাই কেবল মন্দিরে ঢোকার অধিকার রাখে।
ভারতে অবশ্য এই বিতর্ক নতুন নয়। ইন্দিরা গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী তখন তিনি পুরীর মন্দিরে ঢুকতে পারেননি। বলা হয়েছিল, পার্সিকে বিয়ে করেছেন বলে তিনি মন্দিরে ঢোকার অধিকার হারিয়েছেন। পুরীর ওই মন্দিরেও অ-হিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ বলে নির্দেশিকা রয়েছে। এই তালিকায় আরও কিছু মন্দিরও আছে।
তবে উত্তরাখণ্ডে যে নির্দেশিকা ঝোলানো হয়েছে তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গাজিয়াবাদের মন্দিরের ঘটনা। তাই এই নির্দেশিকা আলাদা মাত্রা পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দেশটির সচেতন মানুষ অবশ্য প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন।
প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মতে, বিষয়টিকে একটা বৃহত্তর পটভূমিকায় দেখতে হবে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘কেন্দ্রে বিজেপি সরকার এখন আরএসএসের কোর ইস্যুগুলো রূপায়ণ করছে। তারা ৩৭০ ধারার বিলোপ করেছে। অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, এরপর অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হবে। তারা ২০২৪ সালের মধ্যে কোর ইস্য়ুর রূপায়ণ করতে চায়। সেদিকেই মানুষের নজর নিয়ে যেতে চায় তারা।’