এস্তাদিও দে মারাকানা। কতো আনন্দ বেদনার যে সাক্ষী হয়েছে স্টেডিয়ামটি, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এখানেই ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ স্বপ্ন রূপ নিয়েছিল দুঃস্বপ্নে, একই রূপ পেয়েছিল লিওনেল মেসির আজন্ম ইচ্ছেটাও। কিংবদন্তি পেলের প্রতি সম্মান দেখাতে সেই মারাকানা স্টেডিয়ামের নাম বদলে ‘কিং পেলে স্টেডিয়াম’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। তবে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে।
গত মার্চে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো রাজ্য সরকার আইনসভার ভোটে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, মারাকানার নাম বদলে রাখা হবে ‘এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো রেই পেলে স্টেডিয়াম’, যদিও রাজ্যের গভর্নর ক্লদিও ক্যাস্ত্রোর অমত ছিল এতে।
তবে এবার স্থানীয় অধিবাসীদের তোপের মুখে পড়েছে এ সিদ্ধান্ত। রিওর বাসিন্দাদের মত, স্থানীয় নন এমন কারো নামে স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা অনুচিত। কিংবদন্তি পেলের জন্ম হয়েছিল ব্রাজিলের মিনাস জেরাইস রাজ্যে। এরপর জীবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছেন সাও পাওলোয়। রিওতে কখনোই থিতু হননি তিনি। এ কারণেই মূলত স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েছে স্টেডিয়ামটির নাম বদলানোর এ সিদ্ধান্ত।
এই মারাকানাতেই যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন ব্রাজিলের হয়ে শেষ ম্যাচটা/টুইটার ব্রাজিলের রাজধানীর অধিবাসীদের তীব্র প্রতিবাদে শামিল ছিলেন স্থানীয় সাবেক ফুটবলার ও ১৯৭০ বিশ্বকাপে পেলের সতীর্থ জেরসন ও ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি ক্রীড়া সাংবাদিক মারিও ফিলহোর নাতিও। উল্লেখ্য, স্টেডিয়ামটি মারাকানা নামে পরিচিত হলেও এর কাগুজে নাম ছিল ফিলহোর নামেই। ১৯৪০ সালে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটির পেছনে ছিল যার বড় অবদান। তার নাম থেকে বদলে পেলে, যিনি রিওর অধিবাসীই ছিলেন না কখনো, তার নামে স্টেডিয়ামটার নাম বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে রীতিমতো ‘অযৌক্তিক’ বলে বসেছেন পেলে সতীর্থ জেরসন।
১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিল উরুগুয়ের কাছে হেরেছিল এই মাঠেই, যা সেলেসাও ফুটবলের ইতিহাসে রয়ে গেছে ‘মারাকানাজ্জো’ বা মারাকানা ট্র্যাজেডি নামে। এ মাঠের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসির দুঃখও। ২০১৪ সালের ফাইনালে যে এ মাঠেই জার্মানির কাছে হেরেছিল তার দল।
মাঠটার ইতিহাস এখানেই শেষ নয়। ২০১৬ সালে এখানেই হয়েছিল অলিম্পিকের উদ্বোধনী। ব্রাজিল ফুটবলের পরম আরাধ্য প্রথম অলিম্পিক সোনাটাও এসেছিল এ মাঠেই। সে স্টেডিয়ামের নামটাই বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্থানীয় সরকার।
পেলে এ মাঠে খেলেছেন বহুবার। ভাস্কো দা গামার বিপক্ষে সান্তোসের হয়ে ১৯৬৯ সালে এখানেই ক্যারিয়ারের ১০০০তম গোলের দেখা পেয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি। এখানেই খেলেছিলেন জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচটাও।