পিরোজপুর প্রতিনিধি:: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বুদ্ধিদীপ্ত তরুনদের নানা মতের প্রতিফলন। এসব মতামত সবটা নেতিবাচক নয়। অনেক তরুন মিলে ফেসবুক ভিত্তিক যখন নানা সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় তারুন্য সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কতিপয় মেধাবী তরুন মিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক গড়ে তুলেছেন ভাণ্ডারিয়া উন্নয়ন পরিষদ। উদ্যোক্তা এসব তরুন এলাকায় নানা সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে এলাকায় আশার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সমমনা তরুনরা মিলে ভাণ্ডারিয়া উন্নয়ন পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে ফেসবুক বন্ধুদের সহযোগিতায় বর্ষা মৌসুমে পঞ্চাশোর্ধ বয়সি রিকসা চালকদের মাঝে রেইনকোর্ট বিতরণ, বিভিন্ন দুর্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরন, শীত গরিব অসহায়দের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ ও পবিত্র ঈদুল ফিতরে গরীব বয়স্ক ও শিশুদের মাঝে নতুন ঈদ পোশাক, সেলাই মেশিন বিতরণ করে আসছে। এছাড়া ছোট ছোট (চায়ের দোকান) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পন্য কিনে দেওয়া, গরীব ছাত্র/ছাত্রীদের বই খাতা ও কলম বিতরণ এবং গরীব মেয়েদের বিবাহে সাহায্যকরে থাকে। স্বেচ্ছাশ্রমে এসব মানবিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে উদ্যোক্তা তরুনরা এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, ভাণ্ডারিয়ার কতিপয় তরুন যারা নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করে আসছেন। এসব বন্ধুরা এলাকার নানা সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নিয়মিত তাদের টাইম লাইনে জনস্বার্থে স্ট্যাটাস দিয়ে থাকেন। মানবিকবোধে তাড়িত সমমনা কতিপয় ফেসবুক বন্ধুদের মধ্যে নিয়মিত তথ্যের আদান প্রদান ও মতামত প্রদানের মাধ্যমে একটা সামাজিক সখ্যতা গড়ে ওঠে। সমাজের জন্য শুভ কিছু কাজ করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন কেউ কেউ। কয়েকজন বন্ধু মিলে এভাবেই গড়ে তোলেন ফেসবুক ভিত্তিক ভাণ্ডারিয়া উন্নয়ন পরিষদ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটি উপজেলার গরীব অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৪ সালে কাজ শুরু করেন। এসব তরুনরা তাদের ফেসবুকে নানা মানবিক উদ্যোগের কথা প্রকাশ করে সহযোগি মানুষের অংশগ্রহণের আহবান জানান। এতে উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক বন্ধুদের সাড়া মেলে। এসব ফেসবুক বন্ধুদের সহযোগিতায় ভাণ্ডারিয়ায় নানা সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন হচ্ছে। ভাণ্ডারিয়া উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সামসুদ্দিন খান শিপলু জানান, সমাজে মানুষের মূল্যবোধ সৃষ্টিসহ মেধা ও মননশীলতা চর্চার শক্তিশালী মাধ্যম এখন সামাজিক সাইট ফেসবুক। আমরা সমমনা কতিপয় তরুনরা মিলে ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠনটি গড়ে তুলি। এটি একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আমরা সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতাবোধে ও উদ্যোগটা নেই। সংগঠনটি আর্ত-পীড়িত মানুষের পাশে দাড়ানোর মত নানা সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে চলছে। আশার কথা যে, এসব কর্মকান্ড পরিচালনার সাথে আমাদের সাথে অসংখ্য তরুনরা যুক্ত হচ্ছেন। সংগঠনটি একটি কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রতি বছর নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়। পরিচালনা পর্ষদে আছে ৩৩ জন মানবিক যুবক।
ভাণ্ডারিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাণ্ডারিয়া উন্নয়ন পরিষদ সম্পর্কে বলেন ২০১৪ সালে ভাণ্ডারিয়া উন্নয়ন পরিষদ গঠন হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সংগঠনের কর্মকান্ড দেখে ২০১৯ সালের একটি প্রোগ্রামে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকি। তাহাদের কার্যক্রম কাজের পরিচ্ছন্নতা দেখে আমি মুগ্ধ। সত্যি কথা বলতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এরকম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলা খুবই কঠিন। এই সংগঠনের সকল কার্যক্রম প্রশংসা মূলক। বিশেষ করে চিকিৎসা সেবাটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আমি এই সংগঠনের সকল কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাইনুল ইসলাম মঈন বলেন, প্রতি বছর পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে গরীব অসহায়ের মাঝে কাঁচা ইফতার সামগ্রী ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে গরীব বয়স্ক ও শিশুদের মাঝে নতুন ঈদ পোশাক বিতরন, শীতের সময় শীতবস্ত্র বিতরন করা হয়ে থাকে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে আমাদের ফেসবুক বন্ধুদের সার্বিক সহযোগিতায়।
সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপদেষ্টা মোঃ অহিদুজ্জামান অপু বলেন, ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাল কাজ গুলো বিশ্বের মাঝে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারি। অনেক বিপদগামী যুবক আছে যারা মন্দ কাজে ফেসবুক ব্যবহার করে। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা আমাদের যুব সমাজ, তরুন প্রজন্মের যারা আছে তারা অনেকে উন্নয়ন মূলক কাজে ফেসবুক কে ব্যবহার করছেন। তার ভেতর ভাণ্ডারিয়া উন্নয়ন পরিষদ একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান। তাদের এই মহৎ কর্মকান্ড ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গরীব অসহায় মানুষ সাহায্য পাচ্ছে। শীতবস্ত্র বিতরণ, ঈদের পোশাক বিতরণ থেকে শুরু করে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাড়ানোই প্রদান উদ্দেশ্য ভাণ্ডারিয়া উন্নয়ন পরিষদের। ফেসবুক এমন একটা মাধ্যম যার মাধ্যমে খুব দ্রæত ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে আমরা দাড়াতে পারি।