রোজার ঈদের আগে চলতি মে মাসের প্রথম ৯ দিনে প্রবাসীরা ৯১ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
আজ মঙ্গলবার (১১ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সব সময় ঈদের আগে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা যেন দেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপন করতে পারেন এজন্যই রেমিট্যান্স বেশি পাঠান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, চলতি মে মাসের ৯ দিনে (১-৯ মে) ৯১ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২ শতাংশ বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ১০ মে সোমবারের রেমিট্যান্সের প্রাথমিক তথ্যও পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, একদিনেই (১০ মে) ১০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
সব মিলিয়ে ১-১০ মে এই ১০ দিনে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে ওই কর্মকর্তা হিসাব দেন।
গত মাসে ২০৬ কোটি ৭০ লাখ (২.০৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৮৯ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে এতো বেশি প্রবৃদ্ধি আগে কখনোই হয়নি।
এর আগে এপ্রিল মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২০৬ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার (২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৭ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ বেশি। গত বছর এপ্রিলে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৯ কোটি ডলার।
এদিকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সবশেষ ৩ মে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২ হাজার ৬৭ কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে সিংহভাগ রেমিট্যান্স আসছে ১০টি দেশ থেকে। গত ১০ মাসে মোট আহরিত রেমিট্যান্সের প্রায় ৮৯ শতাংশই পাঠিয়েছেন এসব দেশের প্রবাসীরা।
দেশগুলো হলো- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ওমান, কাতার, ইতালি ও সিঙ্গাপুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসাবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ ছিল। তারও আগে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সরকার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা দেওয়া হচ্ছে সুবিধাভোগীদের।
এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।