একের পর এক উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে রান এসেছে কম। তার উপর শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপ লম্বা৷ গত ম্যাচে আট নম্বর ব্যাটসম্যান হাসারাঙ্গা করেছে ৭৪ রান। তবে শেষ পর্যন্ত ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে কোন কিছুই বাধা হয়ে থাকতে পারেনি। মোস্তাফিজ-মিরাজে লঙ্কানদের ১০৩ রানে হারিয়েছে টাইগাররা।
বৃষ্টি বাধায় খেলা থামার আগে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ছিল ১২৬-৯। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১২ বলে ১২১ রান। ওভার প্রতি ৬০ রান করে। যা কোন সমীকরণেই সম্ভব ছিল না৷
শতরানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর বেশিদূর এগোতে পারেনি সফরকারীরা৷ মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে সাজঘরে ফেরেন দুই অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা ও ওয়াহিন্দু হাসারাঙ্গাকে। শানাকাকে ক্যাচ বানান মাহমুদউল্লাহর আর হাসারাঙ্গাকে বোল্ড করেন এই অফস্পিনার।
পরের দুই উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। বান্দারাকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচ বানানোর পর তামিমের মুঠোবন্দি করান সান্দাকানকে।
উইকেট বিচারে মোস্তাফিজ-মিরাজকে সফল মনে হলেই বোলিংয়ে সুর ঠিক করেছেন মূলত শরিফুল ইসলাম। অভিষেকেই গতি, বাউন্স, লেন্থ দিয়ে পরাস্ত করেছেন ব্যাটসম্যানদের। তারমধ্যে পেয়েছেন কুশাল পেরেরার গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
২৪ রানে কুশাল পেরেরাকে ফেরানোর পর কিছুক্ষণ উইকেট সামলেছিলেন গুনাথিলাকা ও পাথুম নিশাঙ্কা। ৫২ রানে শর্ট বলে গুনাথিলাকাকে সাকিবের ক্যাচ বানান মোস্তাফিজ।
তারপর থেকেই একের পর এক উইকেট তুলে নিয়েছে টাইগার স্পিনাররা। পাথুম নিশাঙ্কাকে তামিম ইকবালের ক্যাচ বানান। ৭৭ রানে চতুর্থ উইকেট ফেলেন মেহেদি মিরাজ। কুশাল মেন্ডিসকে ফাঁদে ফেলেন। আর ৮৯ রানে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে সাজঘরে পাঠান সাকিব।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ পায় উড়ন্ত সূচনা। ইসুরু উদানার করা প্রথম বলেই আসে বাউন্ডারি। থার্ড আম্পায়ার চেক করে দেখেন এটা ছিল নো বল। ফ্রি হিটে আসে আরেক বাউন্ডারি। পরে একটি ওয়াইডের পর আবারও চার। ফলে ম্যাচের প্রথম দুই বলে ১৪ রানের বিরল দৃশ্য দেখা যায়।
কিন্তু পরের ওভারেই টাইগারদের দুশমন হয়ে আসেন পেসার দুস্মান্ত চামিরা। তার প্রথম বলেই এলবিডব্লিইউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল। চামিরার দ্রুত গতির নিচু হয়ে আসা বলটি গিলে লাগে তামিমের প্যাডে। আম্পাায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় শ্রীলংকা। দেখা যায় বল গিয়ে লাগছে লেগ স্ট্যাম্পে।
তার তিন বল পরই একই পরিণতি হয় সাকিব আল হাসানের। বল তার প্যাড ছুঁলে লিটন দাসের পরামর্শে রিভিউ না নিয়ে মাঠ ছাড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
পাওয়ার প্লে শেষে স্কোর ছিল ৪৪-২। তারপরের ওভারে আসে ৫ রান। তবে দ্বাদশ ওভারের প্রথম বলেই আউট হন লিটন। সান্দাকেন করা প্রথম বলটি ছিল অনেকটা শর্ট ও বাইরে। কিন্তু ব্যাট চালিয়ে পিছনে পয়েন্টে থাকা হাসারাঙ্গার মুঠোবন্দি হন লিটন।
৭৪ রানে মোসাদ্দেকও সাজঘরে ফেরার পর হাল ধরেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। প্রথমে দেখেশুনে খেললেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রানের গতি। প্রথম ১০০ রান যেখানে আসে ২৫ ওভারে পরের ৮ ওভারেই আসে ৫০ রান।
ধনাঞ্জায় ডি সিলভাকে দুই ওভারে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু বড়ই দুর্ভাগ্য তার, লাকসান সান্দাকানের বলে স্কুপ করতে গিয়েছিলেন, বুঝতে পেরে নিজের বাঁহাত বাড়িয়ে দেন লঙ্কান কিপর কুশাল পেরেরা। বল গিয়ে তার মুঠোবন্দি হয়। সাজঘরে ফেরার আগে ৫৮ বলে ৪১ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খোলেন আফিফ হোসেন। পরে চামিরার ওভারে আসে আরও এক চার। একই কাজ ইসুরু উদানার ওভারে করতে গিয়ে ধরা পড়েন নাথুম নিশাঙ্কার হাতে। আটে নেমে ভালো করতে পারেননি মেহে,দি হাসান মিরাজও। ওয়াহিন্দু হাসারাঙ্কার লেগ স্পিনে বোল্ড হন।
স্কোরকার্ড:
বাংলাদেশ ২৪৬। মুশফিক ১২৫, মাহমুদউল্লা’হ ৪১, লিটন ২৫। চামিরা ৪৪-৩, সান্দাকান ৫৪-৩, উদানা ৪৯-২।
শ্রীলঙ্কা ১৪১-৯। গুনাথিলাকা ২৪, নিশাঙ্কা ২০, কুশাল মেন্ডিস ১৫, আশেন বান্দারা ১৫। মোস্তাফিজ ১৬-৩, মিরাজ ২৮-৩, সাকিব ৩৮-২, শরিফুল ১৭-১।