রিয়াদ হোসেন :: সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। ফুটপাতে বসে আছেন বৃদ্ধ হরিপদ বাগচী (৯০)। অপেক্ষায় আছেন কখন দু’টি লাটাই বিক্রি হয়। অনেকে বলছেন, লাটাই কত? তবে বলেই উত্তর না শুনে তারা চলে যাচ্ছেন নিজ গন্তব্যে। আবার অনেকে লকডাউনে বাড়িতে থাকা ছেলে মেয়ের জন্য লাটাই দরাদাম করছেন। কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
রুপসার রাজাপুর গ্রামের বৃদ্ধ হরিপদ লাটাই বিক্রি করেই কিনে নিয়ে যাবেন চাল ডাল। তা দিয়েই হবে তার রাতের খাওয়া দাওয়া। প্রতিদিন সকাল ১০ টায় ব্যাগে করে কিছু লাটাই নিয়ে আসেন খুলনা শহরে। শহরের সদর থানার সামনে বসেই বিক্রি করেন নিজ হাতে বানানো ঘুড়ি উড়ানোর উপকরন এই লাটাই। কোন দিন চারটা আবার কোনদিন পাঁচটা লাটাই বিক্রি হয় তার। কখনও ১২০ টাকা আবার কখনও ১০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করেন এটি। তবে ধনী পরিবারের কেউ এলে একটু দাম দিয়েই কিনে নিয়ে যায় তারা। এমনটা বলছিলেন হরিপদ বাগচী।
তিনি আরো বলেন, ‘লাটাই এ বছর ভালো বিক্রি হয়নি। গতবছর লকডাউনের সময় আরো দামে বিক্রি করেছি। এটি বিক্রি করে বেশকিছু টাকা লাভ হয়৷ তবে পরিমানে অল্প বিক্রি করায় বেশি টাকা হয় না।যে টাকা হয় তা দিয়েই আমার সংসার চলে।পরিবারে ছোট ছেলেটা কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে। সবমিলে ছেলে, নাতি, বৌ নিয়েই আমি সুখী আছি৷ আমার কোন দুঃখ নেই’।
পাশে থাকা ছবেদা বিক্রেতা জব্বার শেখ বলেন, ‘লোকটা বেশ সাদাসিধে মানুষ। প্রায় প্রতিদিন এসে আমার পাশে বসে লাটাই বিক্রি করে। কখনও দিনে তিনটা আবার চারটাও বিক্রি করে।দুপুরের সময় দেখি কিছু ভাজাপোড়া আর কেক বিস্কুট এনে খায়।লোকটা বসে মনে মনে গান গায়।দেখে মনে হয় সে সুখী মানুষ ’।