আপনি যদি কোন বিধবা ভাতার নামের তালিকায় পুরুষ মানুষের নাম শুনেন তাহলে কি অবাক হবেন না? অবশ্যই অবাক হবেন কারণ বিষয়টি অবাক হওয়ারই মতো। তবে এরচেয়ে অবাক করা অনেকগুলো বিষয়ের খোঁজ আপনি পেয়ে যাবেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে।
এই ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য, হাট-বাজার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি চেয়ারম্যানের নামও ঠিক নেই! বরং আছে পুরাতন এবং ভুলে ভরা তথ্যের সমাহার। যেমন ধরুন হিন্দু অধ্যাষিত পুরো চারটি জনপদে ‘কলাগাছি জামে মসজিদ’ নামে একটি মসজিদের উপস্থিতি উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ওই এলাকার স্থানীয় কেউই সেই মসজিদটির ব্যাপারে অবগত নন। শুধু কলাগাছি জামে মসজিদই নয় অদ্ভুত সব তথ্যের মিলনমেলা হয়েছে এই ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে।
ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইটে বর্তমান ‘হ-য-ব-র-ল’ অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য সংশোধনী না থাকায় বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ইউনিয়নের জনসাধারণ রয়েছেন বিভ্রান্তিতে।
খেশরা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখা যায়, ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে মানচিত্র অপশন দেখালেও সেখানে দেখাচ্ছে উপজেলার মানচিত্র, ছবির গ্যালারির অপশনে নেই কোন ছবি। আছে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় গড়মিল। মৌলিক তথ্যে ৩৫ জন দেখালেও ভিতরে নাম দেওয়া ৫২ জনের নাম। এ দিকে ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বলছেন, ইউনিয়নে ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫৩ জন।
ইতিহাস অপশন থাকলেও নেই কোন তথ্য। ইউনিয়নে হাট বাজারের সংখ্যা ৯টি’র অধিক হলেও ওয়েব সাইটে দেওয়া হয়েছে একটি মাত্র।
বর্তমান সরকারের আমলে বেসরকারি (রেজি:) প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সব সরকারি করলেও ওয়েবসাইটে এখনও ১৮ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্বিলত তথ্য দেখাচ্ছে। আরো বেশি অবাক করা তথ্য দিচ্ছে বিধবা ভাতার নতুন প্রস্তাবিত তালিকায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গোলক দাশের পরিবর্তে মো. হাই সরদারকে বিধবা ভাতায় নাম প্রস্তাবিত হয়েছে।
বর্তমান পরিষদ, কর্মচারীদের অপশন থাকলেও সেখানে নেই কোন তথ্য, নাম, মোবাইল নম্বর। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্
ঘোষনা হলেও ওয়েবসাইটে এখনও ২০১৪-১৫ বাজাটের তথ্য দেওয়া।
অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে ‘প্রকল্পসমূহ’ ক্যাটাগরিতে প্রকল্প সংক্রান্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে- প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করলে থলের বিড়ার বেরিয়ে আসতে পারে বলে প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে প্রকল্প সমূহের প্রস্তাবিত অংশে দেখা গেছে, সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধার কাবিখার বরাদ্দের তালিকা, প্রকল্পের নাম ও অবস্থানের তথ্য দেওয়া। উল্লেখ থাকে, ‘রসুলপুর জরিফ উদ্দিনের বাড়ির নিকট হতে হাফিজারের বাড়ির নিকট ব্রিজ পর্যন্ত একটি সংযোগ রাস্তা পুনঃনির্মাণ’। প্রকল্প শেষে দেখা যায় ইউপি চেয়ারমান মো. রবিউল করিম দুলা’র নাম! অথচ এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক রাজিব হোসেন।
কলাগাছি জামে মসজিদের বিষয়টি নিয়ে খেশরা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য অনন্ত কুমার সরকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, হিন্দু অধ্যাষিত এই চার গ্রাম মিলে ২৩০০ ভোটার এবং কলাগাছি গ্রামে ১৩৫০ জন ভোটার রয়েছে।যার মধ্যে মুসলিম কেউ নেই,সুতুরাং এখানে মসজিদ থাকার প্রশ্নেই আসে না। তবে তিনি বলেন, রমজানপুর নামক একটি জায়গায় নতুন কিছু মুসলমান সম্প্রদায় বসবাস শুরু করেছে। সেখানে মসজিদ আছে কিনা আমাকে জেনে আপনাকে জানাতে হবে। তবে পরবর্তীতে এ বিষয়ে তিনি আর যোগাযোগ করেননি।
বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভাষক রাজিব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘সত্য কথা বলতে আমি ওয়েবসাইটা তো দেখি না। ওটা দেখে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও উদ্যেক্তা’।
তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে এটা কি আপডেট করা জরুরি নয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আসলে এটা করা উচিত। আমি এটি আপডেট করার চেষ্টা করছি’।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করলে তিনি বলেন, ওয়েবসাইটটি আপডেট রাখার কাজ ইউনিয়ন পরিষদ উদ্যোক্তার। তবে তার কাজের সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন ইউপি চেয়ারম্যান। এখন যদি তারা ভুল তথ্য ওয়েবসাইটে আপলোড করে রাখেন এবং এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পায় তবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’