করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবার থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে খুলনায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি), জেলা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২১জুন) নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে মাইকিং ও প্রচারণা চালানো হয়েছে। এর আগে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মহানগরীর তিনটি থানা ও জেলার একটি উপজেলায় কঠোর বিধি নিষেধ দেয়া হলেও ১৭দিনে সংক্রমণ হারে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। এ অবস্থায় কঠোর লকডাউন ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।
খুলনার স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত জেলা হিসেবে খুলনায় দিন দিন করোনা আক্রান্তে সংখ্যা বাড়ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সর্বশেষ ৬১৫টি সোমবার (২১ জুন) পরীক্ষায় সনাক্ত হয়েছেন ১৭৫জন। আক্রান্তের হার ২৮ শতাংশ। এদিন করোনায় তিনজন ও উপসর্গে তিনজনসহ ৬জনের মৃত্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৯৯৬জন। আর মারা গেছেন ২১১জন। এছাড়া রবিবার ৭৯৮টি পরীক্ষায় সনাক্ত হয়েছে ২২৩টি। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী সনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শনিবার ৩৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা সনাক্ত হয়েছেন ১৪৯জন। এদিন আক্রান্তের হার ৩৮ শতাংশ। শুক্রবার অপরদিকে খুলনায় সর্বশেষ করোনা সনাক্ত হার দেখাগেছে, ৩৩ দশমিক তিন শতাংশ। এদিন ৬৭৮টি নমুনার মধ্যে করোনা সনাক্ত হয়েছেন ২২৬জন।
গেল ৪ জুন ভোর থেকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির এক সপ্তাহের জন্য খুলনার রূপসা উপজেলা, খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা এবং খালিশপুর থানায় কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করে। যা পরবর্তীতে বৃদ্ধি করা হলেও সোমবার পর্যন্ত সংক্রমণে তেমন প্রভাব পড়েনি। এ অবস্থায় শনিবার (১৯ জুন) জেলায় এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি। রবিবার সন্ধ্যায় খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে । তিনি জেলায় আগামী ২৮ জুন পর্যন্ত বিধি-নিষেধ আরোপ ও লকডাউন ঘোষণা করেন। লকডাউনকালে জেলার অভ্যন্তরে অথবা আন্ত:জেলা গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকবে। খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগমন ও বহিরাগমন বন্ধ থাকবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুলনায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণে মঙ্গলবার থেকে সকল ধরণের দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল ও কোচিং সেন্টারসমূহ বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচাবাজারের দোকান প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এ সময়ের মধ্যে হোটেল-রেস্তোরাগুলো পার্সেল আকারে খাবার সরবরাহ করতে পারবে। ওষুধের দোকান সার্বক্ষনিক খোলা রাখা যাবে। সবধরণের পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জেলার অভ্যন্তরে সকল ধরণের সাপ্তাহিক হাট/গরুর হাট বন্ধ থাকবে। জেলার অভ্যন্তরে অথবা আন্ত:জেলা গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকবে। খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগমন ও বহিরাগমন বন্ধ থাকবে। ইজিবাইক, থ্রি-হুইলারসহ যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে অবস্থানকালে সকলকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। তবে সরকারি-বেসরকারি অফিসের জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অফিস চলাকালীন তাদের নিজ নিজ অফিসের পরিচয় পত্র নিয়ে বাইরে চলাচল করতে পারবে।
আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ¦ালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট অফিসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং উৎপাদনশীল শিল্প ও কল-কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম এ বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বিধি-নিষেধ খুলনা জেলা ও মহানগরের সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোরভাবে মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ পৃথক পৃথক সভা করে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দলটি ওয়ার্ড ও পাড়ামহল্লায় পর্যায়ে করোনা সচেতনতা গড়তে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। খুলনা সিটি করপোরেশন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের উদ্যোগে লকডাউন সফল বাস্তবায়নের জন্য মাইকিং ও প্রচারণা চালাচ্ছে।