বাগেরহাট সদর উপজেলা বারুইপাড়া ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আবুল হোসেন শেখ। পেশায় চিংড়ি রেনু পোনা ব্যবসায়ী হোসেন শেখ (স্থানীয় ভাবে হোসেন শেখ নামে পরিচিত) বানিজ্যিক ভাবে নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। সেই খামারেই ঈদুল অজহার কোরবানির জন্য পালন-পালন করেছেন একটি আমেরিকান ব্রাহমা ও দুটি অষ্টিলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরু। আকারে বড় হওয়ায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভীড় থাকছে হোসেন শেখ এর বাড়ীতে।
অনেকেই আসছেন দামদর করে দেখতে। দেশীয় পদ্ধাতিতে কোন প্রকার ওষুধ ছাড়াই গরু তিনটি মোটাতাজা করেছেন তিনি। এ কারনে দামটাও চাচ্ছেন বেশি। তবে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের কারনে জেলার অন্যান্য খামারিদের মত গরুর ন্যায্য মূল্য ও বিক্রি নিয়ে শংকায় রয়েছেন তিনিও। এ অবস্থায় বাগেরহাট প্রাণী সম্পদ বিভাগ ও বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রশাসন বলছে, করোনাকালে কোরবানির গরু বিক্রি নিয়ে জেলার খামারিদের শংকিত হওয়ার কিছু নেই। ইতি মধ্যেই অনলাইনে গরু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
খামারি আবুল হোসেন শেখ বলেন, আমার খামারে বসচেয়ে বড় অষ্টিলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের (১৮শ কেজি) ৪৫ মন ওজনের ‘ভৈরর’। ৯ফিট লম্বা ও ৫ ফিট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার ভৈরবের দাম চাচ্ছি ৪৫ লাখ টাকা। একই জাতের ৯ফিট লম্বা ও ৫ ফিট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার (১৫শ কেজির) ৩৫ মন এর ‘মধুমতি’র দাম চাচ্ছি ২০ লাখ টাকা ও সবচেয়ে আকর্ষনীয় আমেরিকান ব্রাহমা জাতের ৯ ফিট লম্বা ও ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার (১৭শ কেজি) ৪০মন ওজনের ‘সুখি’র দাম চাচ্ছি ৪০ লাখ টাকা। এই তিনটি গরু লালন-পালনে প্রতিদিন আমার ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা ব্যায় করতে হয়। গত বছরও করোনার কারনে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় আমি গরু বিক্রি করিনি। এ বছরও আমি গরুর সঠিক মূল্য পাবো কি না তা নিয়ে শংকায় আছি। তবে ইতি মধ্যেই ঢাকা ও চট্রোগ্রামের ব্যাপারিরা আমার সাথে যোগাযোগ করেছে, তাদের সাথে দরদাম চলছে। আশা করছি এ বছর গরু তিনটি বিক্রি করতে পারবো।
গরু পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত আবুল হোসেন এর ছোট ভাই ইমরান শেখ বলেন, আমাদের এই গরু তিনটি কোন প্রকার ওষুধ ও ক্যামিকেল খাবার ছাড়াই সম্পন্ন দেশি পদ্ধতিতে পালন-পালন করেছি। প্রতিদিনই গরু তিনটির খাবারে খড়-কুটার পাশাপাশি ভূসি, খৈল, ভুট্টার গুড়া, পালিশ কুড়া ও চিটাগুর রাখা হয়”।
স্থানীয় সালাম শেখ বলেন, “আমাগো এই অঞ্চলে এতবড় গরু, আর একটাও নেই। প্রতিদিন দূর-দূরন্ত থেকে লোকজন আসতিছে, গরু তিনটি দেখতি। অনেকে আবার দামদরও করতিছে”।
এদিকে, জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, আসন্ন ঈদুল আজাহা উপলক্ষ্যে জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৩২ হাজার ৫২০টি। এ চাহিদার বিপোরিতে জেলার ৬ হাজার ৪১টি খামারে ঈদুল আজাহাকে সামনে রেখে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৮৫টি পশু। এর মধ্যে গরু রয়েছে ২৫ হাজার ২৫৮টি, মহিষ রয়েছে ৫৭৩টি ও ছাগল/ভেড়া রয়েছে ১১ হাজার ১৫৪টি।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে জেলায় করোনার প্রকপ অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া কোরবানির হাট গুলোতে মানুষ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারনে, এ বছর আমরা অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যেই আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে) সদর উপজেলার পক্ষ থেকে “কোরবানির পশুর হাট” নামে একটি পেজ খোলা হয়েছে। যেখানে সদর উপজেলার খামারিরা তাদের গরুর ছবি ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ছবি আপলোড করতে পারেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ওয়োবসাইট নির্মান কাজ চলোমান রয়েছে। যেটি হয়ে গেলে অনলাইনে গরু বিক্রি বাড়ার পাশাপাশি কোরবানি দিতে আগ্রহি মানুষও সহজে তার পছন্দের গরুটি ক্রয় করতে পারবেন।
বাগেরহাট জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফর রহমান বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে জেলায় পর্যাপ্ত পরিমান পশু মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে আবুল হোসেন শেখ এর মত আমাদের কিছু খামারি প্রাণী সম্পদ বিভাগের সহায়তা নিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে বেশ কিছু গরু মোটাতাজা করেছে। আমরা সব সময় খামারিদের বিভিন্ন সহায়তার পাশাপাশি পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়া গত বছরের মত এ বছরও প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থাকায় অনলাইনে গরু বিক্রির জন্য খামারীদের আমরা সহায়তা করছি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছোট পরিসরে গরুর হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কোরবানির গরু বিক্রি নিয়ে জেলার খামারীদের শংকিত হওয়ার কিছু নেই।