বেল্লাল হোসেন সজল :: পৃথিবীতে সব অর্জনই আনন্দের বার্তা বয়ে আনে না। বাজে বোলিংয়ে প্রতিপক্ষের ফিফটি, কাঁদায় সতীর্থদের। বোলিং বাজে ছিল নাকি প্রতিপক্ষ শক্তিশালী তা বুঝতে হলে দেখতে হবে পরিসংখ্যান। আর পরিসংখ্যান পানির মতই স্বচ্ছ। প্রতিপক্ষ যদি করোনা হয়, তার অর্জন আজ খুলনার মাটিতে ফিফটি প্লাস। আর বোলিংটা যে বাজে করছেন খুলনার জনগণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নেই কোন সামাজিক দুরত্ব, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। যার ফলস্বরূপ করোনায় আজ মৃত্যু ফিফটি প্লাস।
দেশে করোনার নতুন ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে খুলনা। প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। হাসপাতালে শয্যাসংকটের পাশাপাশি দেখা দিচ্ছে অক্সিজেনের সংকট। এ সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর রেকর্ড আবারও ভেঙেছে খুলনা বিভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় সব রেকর্ড ভেঙে বিভাগে সর্বোচ্চ ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে ১ হাজার ৪৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে রোববার (০৪ জুলাই) খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আজ সেই রেকর্ড ভেঙে মারা গেলেন ৫১ জন। সোমবার (০৫ জুলাই) বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে কুষ্টিয়ায়। এ ছাড়া খুলনায় ১৩ জন, যশোরে ছয়জন, মেহেরপুরে পাঁচজন, ঝিনাইদহে পাঁচজন, বাগেরহাটে ও চুয়াডাঙ্গায় দুজন করে এবং মাগুরায় একজন মারা গেছেন।
এদিকে খুলনায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর লাগাম টানতে গত ২২ জুন থেকে কঠোর লকডাউন চলছে। পাশাপাশি গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশের ন্যায় খুলনায় কঠোর লকডাউনে মাঠে রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ এহসান শাহ বলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ৪২টি চেকপোস্ট বসিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারীতে লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে। আর খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালক রাশেদা সুলতানা বলেন এ মহামারী কারো একার পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। সকলের সমন্বয় রূট লেভেল থেকে কাজ করতে হবে।
নিবির মনিটরিং, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও জনপ্রতিনিধি নিয়ে গ্রাম, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ চলছে, বললেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন এনডিসি।
খুলনায় কঠোর লকডাউনে খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ছয়টি টিম। ১০ প্লাটুন সেনাবাহিনী, ২ প্লাটুন বিজিবি ও ৪ ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্য মাঠে রয়েছে।
এছাড়া গতকাল রোববার সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মোঃ নুরল আনোয়ার, এনডিসি, এইচডিএমসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, জি খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন চেকপোস্ট ও সেনাবাহিনীর টহল কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে খুলনা সার্কিট হাউসে প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে এই মহামারি মোকাবেলা করতে হবে। কঠোর লকডাউনে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী।
খুলনা বিভাগে করোনার বিশ্লেষণ:
খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৬২ হাজার ৩৪ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ২৬৫ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪০ হাজার ৫৫৩ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৩৯ জনের। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৬২৬ জনের। এ সময় মারা গেছেন ৩১৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৫১২ জন।
বাগেরহাটে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২১ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮৯৪ জনের। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭১৯ জন।
সাতক্ষীরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১০২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৪০ জন এবং মারা গেছেন ৭৫ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৭২১ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ২৮৬ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৫২১ জন। মোট মারা গেছেন ১৭৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৪৭০ জন।
২৪ ঘণ্টায় নড়াইলে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৭০ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৩ জন। মোট মারা গেছেন ৫০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ১০৬ জন।
মাগুরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৩৪ জন। মোট মারা গেছেন ৩০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩২৮ জন।
ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৮৬ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৭৯০ জন। মোট মারা গেছেন ১০৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৯৯ জন।
২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ২৯২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৭৬৫ জন। মোট মারা গেছেন ২৬২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৯১৪ জন।
চুয়াডাঙ্গায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৫২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮০৫ জন। মোট মারা গেছেন ১০০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩৪৬ জন।
মেহেরপুরে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৮৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১২৬ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৩৮ জন।