সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা রবিবার , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
খুলনায় প্রশিক্ষিত অক্সিজেন যোদ্ধার সংকটে বিপদের শঙ্কা | চ্যানেল খুলনা

খুলনায় প্রশিক্ষিত অক্সিজেন যোদ্ধার সংকটে বিপদের শঙ্কা

দেশব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবে শীর্ষে অবস্থান করছে খুলনা। করোনার এই সংকটে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত তিনটি সরকারি হাসপাতাল ও ১টি বেসরকারি হাসপাতাল। করোনা রোগীর সেবায় অক্সিজেনের প্রয়োজন আবশ্যম্ভাবী। অক্সিজেন সেবা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বেশ কয়েকটি অক্সিজেন ব্যাংক, যেটা নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত এসব অক্সিজেন ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবকরা বেশিরভাগই অপ্রশিক্ষিত হওয়ায় বিপদের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
শুক্রবার (২ জুলাই) জুম্মার নামাজের পর খুলনা অক্সিজেন ব্যাংকের কর্মীরা যে সিলিন্ডার অতিশয় বৃদ্ধা রোগীর বাসায় দিয়ে গেল সেটি চললো রাত ১০টা পর্যন্ত। সাথে-সাথে মনে পড়লো শেখ সোহেল অক্সিজেন ব্যাংকের প্রধান সমন্বয়কারী, জেলা পরিষদ সদস্য চৌধুরী রায়হানের কথা। রাত পৌনে ১১টায় মোবাইল করার পরে অপর প্রান্তে তাঁর সহধর্মিনী বিনয়ের সাথে জানান, ও এখন জিপি ব্যবহার করে। একথা বলেই ওর নম্বরটি দিলেন। সেখানে ফোন দিতেই রায়হান ফরিদ বললো, এখনই পাঠাচ্ছি, কিছু বাদে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এলেন চার কর্মী। ওটাও শেষ হলে আবারো ফোন দেয়া হয়। শেখ সোহেল অক্সিজেন ব্যাংকের কর্মীরা রাত ১টা ৫৮ মিনিটে আরো একটি সিলিন্ডার নিয়ে এলেন। ওরা বললো, ছয় ঘন্টা চলবে। যতবার প্রয়োজন ততবার আমরা সিলিন্ডার নিয়ে আসবো, আপনারা কোনও চিন্তা করবেন না।’ কিন্তু ভোর সাড়ে পাঁচটায় বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি না ফেরার দেশে চলে গেলেন।বিপদের রাত অনেক দীর্ঘ হয়। সে রাত কেটেছে নিন্দ্রাহীন।

সামাজিক মাধ্যমে বেসরকারি অক্সিজেন ব্যাংকের নি:স্বার্থসেবা নিয়ে এভাবেই লিখেছেন খুলনা জজকোর্টের আইনজীবী ফরিদ আহমেদ। শুধু আইনজীবী ফরিদ আহমেদই নন, শত-শত মানুষের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে খুলনার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা অক্সিজেন ব্যাংকগুলো। যারা দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছেন নগরীর অলি-গলি ও মুর্মূষুরোগীর বাড়ি-বাড়ি। তাদের অক্সিজেন সিলিন্ডারে বেঁচে যাচ্ছে অনেক প্রাণ। কিন্তু আর্তমানবতার সেবায় ছুটে চলা এসব তরুনদের অনেকের অক্সিজেন ব্যবহার, শরীরের চাহিদা বিষয়ে প্রশিক্ষণ না থাকায় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে রোগীর জীবন। ফলে অক্সিজেন যোদ্ধা এসব স্বেচ্ছাসেবী তরুনদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, উৎসাহ ও সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, অক্সিজেন ব্যাংক পরিচালনাকারীরাও বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে সাধারণ মানুষের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করতে চান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরীসহ জেলায় পাড়া-মহল্লায় বেসরকারি উদ্যোগে ২০/২১টির মতো অক্সিজেন ব্যাংক গড়ে উঠেছে। যাদের অনেকেই এক বছরের বেশী সময় ধরে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় কাজ করছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান খুলনা অক্সিজেন ব্যাংক। তাদের ৪০জনের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছসেবী রয়েছে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে সোয়া বছরে দেড় হাজারেরও বেশী মানুষ অক্সিজেন সেবা পেয়েছে। তাছাড়া অক্সিজেন সেবা নিয়ে কাজ করছে যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেলের পৃষ্ঠপোষকতায় শহীদ শেখ আবু নাসের অক্সিজেন ব্যাংক, সেখ সোহেল অক্সিজেন ব্যাংক, রোটারি খুলনা অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রকল্প, বিএনপি কল সেন্টার, বিএনপি নেতা বকুলের ‘গণমানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও করোনা সাপোর্ট সেন্টার, মহানগর ও জেলা পূজা উদযাপন কমিটির অক্সিজেন সাপোর্ট সেন্টার, উদীয়মান অক্সিজেন ব্যাংক, সেভ দ্যা ফাউন্ডেশন, বাঁধন ব্লাড ব্যাংক, টিম খুলনা- বিল্ড খুলনা অক্সিজেন ব্যাংক, ‘গোল্ডেন জেনারেশন অব খুলনা জিলা স্কুল, আল কারীম অক্সিজেন সেবা, রূপসার আলো ফুটবেই অক্সিজেন সেবা, ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া অক্সিজেন ব্যাংক, পাইকগাছা অক্সিজেন ব্যাংক, আক্তারুজ্জামান বাবু অক্সিজেন ব্যাংক প্রভৃতি।
খুলনা অক্সিজেন ব্যাংকের সভাপতি সালেহ উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন অক্সিজেন ব্যাংক নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রশিক্ষিত ৪০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। তারা নিজেদের জীবনের মায়া উপেক্ষা করে কাজ করছে। আমরাও মনেকরি, অক্সিজেন ব্যবহার বিষয়ে বেশী বেশী প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এতে সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা পাবেন। স্বেচ্ছাসেবীরাও উৎসাহিত হবে।’
সেফ দ্যা ফাউন্ডেশনের খুলনা নগর সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘অক্সিজেন ব্যবহার ও করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ জরুরী। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বুধবার (৮ জুলাই) আমরা তিনটি সংগঠন বিএমএ’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। নতুন স্বেচ্ছাসেবক তৈরিতে এ ধারাবাহিকতা রাখা হবে।’
স্বজন হারানো অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ বলেন, আমার মতো কতশত মানুষের নির্ঘুম রাতের সঙ্গী স্বেচ্ছাসেবী অক্সিজেনযোদ্ধারা। তারা নিরন্তর ছুটে চলেছেন। এর ফলে অসংখ্য মানুষ অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। অক্সিজেন যোদ্ধারা না থাকলে আমাদের প্রিয় খুলনায় লাশ দাফনেরও জায়গা হতো না। তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অন্যাদেরও প্রশিক্ষণও জরুরী। তাহলে তারা আরও ভাল সেবা দিতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা বলেছেন, অক্সিজেন যেমন জীবন বাঁচায়, তেমনি মৃত্যুও ঘটায়। করোনা আক্রান্ত বা মুমূর্ষু রোগীদের অক্সিজেন প্রদানের ক্ষেত্রে শরীরের অক্সিজেন মাত্রা ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিজেন কম হলে যেমন মৃত্যুর কারণ, তেমনি মাত্রারিক্ত অক্সিজেন রোগীর ফুসফুসকে অকেজো করে দিয়ে মৃত্যু ঘটনাতে পারে। করোনাকালীন অক্সিজেন যোদ্ধারা নিজেদের কথা উপেক্ষা করে আর্তমানবতার সেবায় দিনরাত কাজ করছেন। তাদের এই কাজকে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অক্সিজেন সেবা প্রদানে দক্ষ করে তুলতে হবে। না হলে বড় ধরণের বিপদ হতে পারে।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও বিএমএ খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ‘অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। কিন্তু এখন একটি সংকটময় সময় চলছে। এ সময়ে অনেক স্বেচ্ছাসেবী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। তাদেরকে উৎসাহিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলা জরুরী।’
বিএমএ খুলনা জেলা সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, ‘শরীরে অক্সিজেন মাত্রা হ্রাসের ওপর নির্ভর করতে তাকে (রোগী) কি পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন। অক্সিজেন প্রয়োগ কমবেশী হলে বড় বিপদ ঘটতে পারে। হাই ফ্লো ন্যাজেল ক্যানুলার মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ৫০-৬০ লিটার অক্সিজেন দেয়া হয়।কোনা রোগীর হাইফ্লো নাজেল ক্যানুলা প্রয়োজন হলে সিলিন্ডার অক্সিজেন সাপোর্ট কাজে আসবে না। বরং আরও চাহিদা সৃষ্টি করবে।’
এই চিকিৎসক নেতা আরও বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী তরুণদের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা ইতিমধ্যে তাদের সাথে সচেতন করতে কাজ শুরু করেছি। এতে তারা দক্ষ হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও এ বিষয়ে উদ্যোগ জরুরী। না হলে এসব মানুষের শত চেষ্টা ও কষ্ট কোন কাজে আসবে না।’
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘দক্ষ ব্যক্তি ছাড়া অক্সিজেন পরিচালনা করতে পারেন না। যারা স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন; তাদের অনেকের অভিজ্ঞতা রযেছে। তারপরও আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবো।

https://channelkhulna.tv/

খুলনা মহানগর আরও সংবাদ

সোনাডাঙ্গায় অস্ত্র-গুলিসহ সন্ত্রাসী ডাবলু গ্রেপ্তার

‘দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না থাকলে উন্নয়ন সম্ভব নয়’ ধর্ম উপদেষ্টা

দ্রুত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

খুলনায় পুলিশের এডিসি কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

খুলনা মহানগরে ১০টি স্থানে ভর্তুকিমূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি চলছে

খুলনায় জাপা কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।