বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। ব্যাংকের ৫ প্রভাবশালী পরিচালক ও চেয়ারম্যানের মধ্যকার কথিত দ্বন্দ্ব এখন আর নেই বলে পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে। তাই আপাতত ব্যাংকের নেতৃত্বে কোনো প্রকার পরিবর্তন আসারও সম্ভাবনা নেই। উদ্যোক্তা পরিচালকদের সমঝোতার ভিত্তিতে আগের মতোই ব্যাংক পরিচালিত হবে বলে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন। এদিকে গত ৩০ জুন অনুষ্ঠিত সাউথইস্ট ব্যাংকের এজিএম বয়কট করা পাঁচ পরিচালকের সূত্র ধরে ব্যাংকটির বিষয়ে নানা ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এফসিএ’কে জড়িয়ে নানা বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও এর শেয়ারহোল্ডাররা। ১৯৯৫ সালে দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সাউথইস্ট ব্যাংকের যাত্রা। জানা গেছে, ২০০২ সালে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হন পেশাদার হিসাববিদ আলমগীর কবির এফসিএ। ২০০৪ সালে তিনি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১৭ বছর সফলতার সঙ্গে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এই ১৭ বছরে তিনি ব্যাংকটিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকে রূপান্তর করেছেন। দীর্ঘ এ সময়ে কেউ কোনোদিন তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। বরং সবার কাছ থেকে নিজের সততা ও নিষ্ঠার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। দীর্ঘদিন ব্যাংকটির নেতৃত্বে থাকা প্রসঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর কবির গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি কখনোই পদ আকড়ে ধরে থাকতে চাইনি। বরং পরিচালকদের অনুরোধ এবং শেয়ারহোল্ডার ও ব্যাংকের স্বার্থেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে সবচেয়ে ভালো পর্ষদ। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থানও দেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে পড়ে। মূলধন সক্ষমতা, মুনাফা পরিস্থিতি, আমানত ও বিনিয়োগের পরিমাণসহ বিভিন্ন সূচকে সাউথইস্ট ব্যাংকের অবস্থান বেশ শক্তিশালী।’ এদিকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. কামাল হোসেন চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এফসিএকে সমর্থন করে বলেন, ‘যে পাঁচ পরিচালক এজিএমে অংশ নেননি, তারা বয়সে প্রবীণ এবং নিজেরা ল্যাপটপ দিয়ে ভার্চুয়াল সভায় অংশ নিতে পারেন না। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। তার চেয়েও বড় কথা এখন সেসব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। তাই নেতৃত্বে পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।’ এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তের খবর ছড়ানো হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ব্যাংকিং কার্যক্রম ও সাফল্য প্রসঙ্গে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাকে আরো কয়েকজন ফোন করেছেন। এরপর আমি বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে কিছুই পাইনি। এই খবর সম্ভবত ইচ্ছে করে ছড়ানো হয়েছে। সাউথ ইস্ট ব্যাংক নিয়ে কোনো তদন্ত হচ্ছে না। সর্বশেষ অনুসন্ধান ও তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকটি স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে বলেই আমরা জেনেছি।’ এদিকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কয়েকজন গণমাধ্যমের সঙ্গে নানা কথা বললেও শেষ পর্যন্ত যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে আলমগীর কবিরই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে আপাতত সব ধরনের দ্বন্দ্ব ও ভুল বোঝাবুঝির অবসান প্রমাণ করছে ব্যাংক পরিচালনায় এখনো সফলভাবেই নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন আলমগীর কবির এফসিএ। উল্লেখ্য, ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ১৮৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৯.৮২ শতাংশ। ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স পায় ২৩ মার্চ, ১৯৯৫ এবং প্রথম শাখার যাত্রা শুরু করে ২৫ মে, ১৯৯৫। বর্তমানে ব্যাংকটি বিভিন্ন ধরনের সেবা দিচ্ছে – এর মধ্যে রয়েছে, রিটেইল ব্যাংকিং, কর্পোরেট ব্যাংকিং, ইসলামী ব্যাংকিং, বিনিয়োগ ব্যাংকিং, এস এম ই ব্যাংকিং, বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যাংকিং, বৈদেশিক রেমিট্যান্স ব্যাংকিং।