ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিদেশযাত্রায় আদালতের অনুমতিক্রমে দুদক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
শুক্রবার দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত নভেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইভ্যালি কম লিমিটেডের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদগুলোর পেপার কাটিংসহ একটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই/অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়।’
এর পরেপ্রেক্ষিতে দুদকের মানিলন্ডারিং অনুবিভাগের দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো অভিযোগের বিষয়বস্তু ছিল মূলত ইভ্যালি কম লিমিটেড নামীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন লোভনীয় অফার দেয়ার মাধ্যমে তার গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অগ্রীম আদায় করছে। যদিও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা গ্রাহকদের পণ্য দিচ্ছে না বা অন্য পণ্য দিচ্ছে। গ্রাহকের অর্ডারকৃত পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলেও যথাসময়ে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না ইত্যাদি।
পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইভ্যালি কম লিমিটেডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের আলোকে আরও একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়।
গত ৮ জুলাই ওই অভিযোগ পাওয়ার পর কমিশনের অনুমোদনক্রমে অভিযোগটি পূর্ববর্তী অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রাপ্ত অভিযোগ পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ বছর ১৪ মার্চ ইভ্যালি কম লিমিটেডের চলতি সম্পদ প্রায় ৬৫.১৮ কোটি টাকা এবং মার্কেট দায় প্রায় ৪০৭.১৮ কোটি টাকা।
তার মধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রীম হিসেবে গৃহীত দায় প্রায় ২১৪ কোটি টাকা এবং ইভ্যালির মার্চেন্টদের কাছে দায় প্রায় ১৯০ কোটি টাকা।
ফলে স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কাছে চলতি সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫.১৮ কোটি টাকা। যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তার চলতি দায়ের বিপরীতে মাত্র ১৬.১৪% গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। তারপর গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গৃহীত প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
ফলে ওই সম্পূর্ণ অর্থ আত্মসাৎ অথবা অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ওই অভিযোগের বিষয়বস্তু আমলে নিয়ে কমিশনের নির্দেশক্রমে দুদকের অনুসন্ধান টিম কাজ শুরু করে। প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি সংগ্রহ করে।
অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ইভ্যালি কম লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিসেস শামীমা নাসরীন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল গোপনে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন।
অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ছাড়লে সার্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যহত হতে পারে বলে নিশ্চিত হওয়ায় ৮ জুন তাদের বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।