সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজের স্পিন ঘূর্ণিতে ২৭৬ রানে গুটিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশে প্রথম ইনিংস থেকে ১৯২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছে। টাইগারদের হয়ে মেহেদি মিরাজ ৮২ রানে ৫টি উইকেট তুলে নেন। সাকিব সমান রান খরচায় নেন ৪টি। বাকি উইকেটটি তাসকিনের।
হারারে টেস্টে তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে মিরাজই ছিলেন বল হাতে উজ্জ্বল। ফলে জিম্বাবুয়ের বড় রান করার স্বপ্নটা পূরণ হয়নি। স্বাগতিকদের লোয়ার অর্ডার দাঁড়াতেই পারেনি মিরাজের ঘূর্ণিতে।
এর আগে দ্বিতীয় সেশনটাও ভীষণ ভালো কেটেছে বাংলাদেশের। জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানদের এই সেশনে কোণঠাসা করে রাখেন টাইগার বোলাররা। ২৯ ওভারের সেশনে মাত্র ৩৩ রান তুলতে পারে জিম্বাবুয়ে, উইকেট হারায় ৩টি।
তবে স্বস্তির এই সেশনে কাঁটা হয়ে রয়ে গিয়েছিলেন তাকুজওয়ানাসে কাইতানো। ৮২ রানে অপরাজিত থেকে চা-বিরতিতে যান, ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টেই সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল।
৫ উইকেটে ২৪৪ রান নিয়ে তৃতীয় সেশন শুরু করে জিম্বাবুয়ে। এই সেশনের শুরু থেকেই ভয়ংকর হয়ে উঠেন মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথমেই ফেরান সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় দাঁড়ানো কাইতানোকে।
মিরাজের বল ফ্লিক করতে গিয়ে লেগ সাইডে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের দুর্দান্ত ক্যাচ হন জিম্বাবুইয়ান ওপেনার। ৩১১ বলে ৮৭ রানের ধৈর্য্যশীল ইনিংসে ৯টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
এরপর ডোনাল্ড তিরিপানোকে (২) এলবিডব্লিউ এবং ভিক্টর নিয়াচি (০) ও ব্লেসিং মুজারবানিকে (২) বোল্ড করেন মিরাজ। শেষটা আবার সেই সাকিবের। রিচার্ড এনগাভারাকে (০) স্লিপে নাজমুল হাসান শান্তর সহজ ক্যাচ বানিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস মুড়িয়ে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সঙ্গীর অভাবে ৩১ রানে অপরাজিত থেকে যান রেগিস চাকাভা।
দ্বিতীয় সেশনে জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানদের প্রতিরোধ হঠাৎ ভেঙে দেন সাকিব-তাসকিনরা। তৃতীয় দিন লাঞ্চ বিরতির পরও অনেকটা সময় স্বাগতিকরা চোখ রাঙানি দিচ্ছিল।
তবে সাকিব আল হাসান জুটি ভাঙার পরই দ্র্রুত বেশ কয়েকটি উইকেট তুলে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। ২ উইকেটে ২২৫ রান ছিল জিম্বাবুয়ের। সেখান থেকে ৫ উইকেটে ২২৯ রানে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। অর্থাৎ ৪ রানে ৩ উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা।
অথচ সকালের সেশনে ব্রেন্ডন টেলরকে ফিরিয়েও স্বস্তিতে ছিল না বাংলাদেশ। ব্যাটিং সহায়ক হয়ে পড়া উইকেটে টাইগার বোলারদের ঘাম ঝরিয়ে ছাড়ছিলেন জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানরা।
টেলর আউট হওয়ার পর আরেকটি বড় জুটির পথে হাঁটছিলেন কাইতানো আর ডিয়ন মায়ার্স। দেখেশুনে খেলে ২৩ ওভারের মতো কাটিয়ে দেন তারা। অবশেষে ৪৯ রানের এই জুটিটি ভাঙেন সাকিব।
বাঁহাতি সাকিবের ঘূর্ণির বিপক্ষে উচ্চাভিলাষী সুইপ শট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারিতে মেহেদি হাসান মিরাজের ক্যাচ হন মায়ার্স। মাথার ওপরে উচ্চতার বল দারুণভাবে তালুবন্দী করেন মিরাজ। ৬৫ বলে একটি করে চার-ছক্কায় মায়ার্স তখন ২৭ রানে।
এরপর আবারও আঘাত সাকিবের। ১৭ বলে শূন্য রানে থাকা টিমিসেন মারুমাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন টাইগার অলরাউন্ডার। এই উৎসবে যোগ দেন তাসকিন আহমেদও।
দারুণ বোলিং করা তাসকিন উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না। অবশেষে নতুন বল নেয়ার পর ফিরেছে তার ভাগ্য। রয়া কায়াকে (০) দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান ডানহাতি এই পেসার। যে বলটা ঠিক বুঝেই উঠতে পারেননি কায়া।
আজকের দিনের প্রথম সেশনে ২৬ ওভার ব্যাটিং করে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান যোগ করে স্বাগতিকরা। আগেরদিন ৪১ ওভারে ১ উইকেটে ১১৪ রান করেছিল তারা।
টেস্ট ক্যারিয়ারে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরের সবচেয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। সাদা পোশাকে তার ক্যারিয়ারের অর্ধেকের বেশি রান বাংলাদেশের বিপক্ষেই। এমনকি ছয় সেঞ্চুরির মধ্যে পাঁচটিই করেছেন এই প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচে।
চলতি হারারে টেস্টেও সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন আরেকটি সেঞ্চুরির। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে খুব একটা ছন্দে না থাকলেও, বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটেই ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিং করছিলেন ৩৫ বছর বয়সী এ অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন, সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজে গড়া বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণকে একদমই পাত্তা দেননি টেলর। দিনের শুরু থেকেই বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করতে থাকেন তিনি। এমনকি রিভার্স সুইপ খেলতেও দ্বিধা করেননি তিনি।
তবে অতি আক্রমণাত্মক হওয়ার মাশুলই গুনতে হয়েছে টেলরকে। মেহেদি মিরাজের করা ইনিংসের ৫৭তম ওভারে স্লগ সুইপ করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বল লাগে ব্যাটের ভেতরের কানায়, সরাসরি চলে যায় শর্ট স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো ইয়াসির আলি রাব্বির হাতে।
যার ফলে সমাপ্তি ঘটে টেলরের ১২ চার ও ১ ছয়ের মারে খেলা ৯২ বলে ৮১ রানের ইনিংসের। টেলর ফিরে গেলেও সেশনের বাকি দশ ওভারে আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি কাইতানো ও মায়ার্স। নিজের অভিষেক ইনিংসে খেলতে নেমে মুখোমুখি ১২তম বলেই প্রথম ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন মায়ার্স।
এর আগে অভিষেকেই ফিফটি তুলে নেন কাইতানো। সত্যিকারের টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করে পঞ্চাশে পৌঁছতে ১৫৮ বল খেলেন এ ডানহাতি তরুণ। সেঞ্চুরিটা প্রাপ্যই ছিল। কিন্তু পারলেন না।