শেখ মাহতাব হোসেন :: ডুমুরিয়ায় সৌদি আরবের জনপ্রিয় ‘সাম্মাম’ ফল চাষে বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষক ইলিয়াস আশার আলো দেখছেন ।সৌদি আরবের জনপ্রিয় ফল ‘সাম্মাম’ এখন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পাচপোতা গ্রামে ইলিয়াস মোল্লা’র চিংড়ি ঘেরের মাচায় ফলেছে। ক্রিম রং’র মূল্যবান এই ফলগুলো ডুমুরিয়ার কৃষককুলের কাছে নতুন আশা জাগিয়েছে।।
উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের পাচপোতা বিলের ভেতর সাম্মান চাষি ইলিয়াস মোল্লা ও তার ভাই আফজাল মোল্লা’র সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৌদি আরব-সহ মধ্যপ্রাচ্যে ধুসর মরুভূমিতে ফলা সাম্মাম খুবই জনপ্রিয় ও মূল্যবান ফল। এর বাইরের আবরণ খুব শক্ত হলেও ভেতরে খুবই নরম, অনেকটা পেপের মতো। দেখতে খানিকটা তরমুজ বা বাঙ্গি’র মতো হলেও ফলের গায়ে একরকম জাল-জাল দাগ-সহ সুঘ্রাণযুক্ত সাম্মাম মিষ্টি ফল। গত কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে আসলেও এই প্রথম ডুমুরিয়া অঞ্চলের শ্যামল মাটিতে খুব ভালো ফলন ধরেছে। ইতোমধ্যে এলাকায় অধিকাংশ সবজি চাষি-সহ সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে সাম্মাম’র নাম ছড়িয়ে পড়েছে। এই ফল দেখতে প্রতিদিন এলাকার চাষি-সহ বেশকিছু মানুষ পাচপোতা বিলে যাচ্ছেন। সাম্মাম চাষের ধরণ সম্পর্কে জানা গেছে, বৈশাখ মাসে ঘেরের আইলে অসময়ের তরমুজ, কুমড়া বা লাউ চাষের মতো করে জৈব, টিএসপি ও এমওপি সার দিয়ে ১ হাত অন্তর মাদা তৈরি করে বীজ রোপন করতে হয়।
কিভাবে এই সাম্মাম চাষে আগ্রহি হলেন, জানতে চাইলে ইলিয়াস মোল্লা(৫০) বলেন, গত ৩ বছর ধরে আমরা দুই-ভাই আমাদের চিংড়ি ঘেরে তরমুজ চাষ করে থাকি। চলতি বছর আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে লাভজনক নতুন নতুন সবজি চাষের ধারণা পেয়েছি। প্রতি বছরের মতো বীজ কিনতে উপজেলার চুকনগর বাজারে আল্লার দান স্টোরে গেলে তারা বলে, তোমরা তরমুজের পাশাপাশি সৌদি আরবের অনেক সুস্বাদু ও মূলবান ফল ‘সাম্মান’ চাষ করে দেখো, অনেক লাভ পাবে। তার কথা ও কৃষি অফিসের ধারণা মিলিয়ে আমি প্রতিটা ১২টাকা দরে ১৫টা বীজ কিনে এনে প্রতি মাদায় ১টা করে লাগাই। বীজ লাগানোর ৪-৫ দিন পর চারা বের হয়ে ১ মাসের মাথায় গাছ মাচায় উঠে ফুল আসতে শুরু করে। মোট ৭৫ দিনে পাকা ফল কেটেছি। আমার ১৫টা গাছে এ বছর ৪০টারও বেশি ফল হয়েছে। গত সপ্তাহে খুলনা কাচা বাজার আড়তে ৬০ টাকা কেজি দরে ১৮টি পাকা সাম্মাম বিক্রি করেছি। প্রতিটা ফল গড়ে ৩ কেজি ওজন হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য এই সাম্মাম চাষিরা তাদের ক্ষেতে হলুদ তরমুজের মতো দেখতে ‘রিয়া’ নামের আরও একটি বিদেশি ফল চাষ করেছেন। তারও স্বাদ ও ফলন ভালো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সবজি চাষি রেহেনা বেগম বলেন, সাম্মাম রসালো ও মিষ্টি, তবে অন্যসব ফলের চেয়ে দারুণ স্বাদ। এলাকার সবজি চাষি আবদুস ছালাম বলেন, আমাদের এলাকায় সৌদি আরবের ফল সাম্মাম ফলেছে শুনে বা দেখে আমরা দারুণ আশাবাদি। ভালো দাম ও স্বাদের কথা শুনেছি। আগামি বছর আমরাও সাম্মাম চাষ করবো।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোসাদ্দেক হোসেন আমাদের ডুমুরিয়া খুলনা প্রতিনিধি শেখ মাহতাব হোসেন কে জানান, সাম্মাম বা রকমিলন এলাকায় সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায় আমরা তাদেরকে সব রকম সহয়তা দিয়েছি। এর বিশেষ কোনো পরিচর্যারও দরকার হয়নি। আগামি বছর ডুমুরিয়ায় এর চাষ বাড়বে। আর সাম্মামের আবরণ শক্ত হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায় বলে বিদেশে রফতানির সম্ভবনাও আছে।