সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা বৃহস্পতিবার , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতাই ২১ আগস্ট এবং ইতিহাসের ন্যায় বিচার | চ্যানেল খুলনা

১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতাই ২১ আগস্ট এবং ইতিহাসের ন্যায় বিচার

আগস্ট মাস বাংলাদেশের জন্য একটি শোক এবং আতঙ্কের মাস। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্থপতি, বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেদিন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতার বাসভবনে উপস্থিত পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে তারা নিমর্মভাবে হত্যা করে। দশ বছর বয়সী ছোট্ট রাসেলকেও তারা হত্যা করে – এতোই ভয় তাদের বঙ্গবন্ধুর রক্তকে। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা।
দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী এবং খুনিরা ভেবেছিল জাতির পিতার দুই কন্যা কখনো দেশে ফিরতে পারবে না এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগও আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরের কথা। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগকে আবারও বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত করেন। আবারও আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতির আশা আকাঙ্খা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দলে পরিণত হয়। স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত এবং বাংলাদেশ বিরোধী দেশি-বিদেশী গোষ্ঠী ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা স্থায়ীভাবে কুক্ষিগত করতে বিএনপি নেতৃত্বধানী চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যার চেষ্টা চালায়।
২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়াবহ কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের অপূর্ণ উদ্দেশ্যকে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের এবং দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নেতৃত্বশূন্য করার জঘন্য অপচেষ্টার দিন। সেদিন নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে পারলেও মহিলা লীগের তৎকালীন সভাপতি আইভী রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ ২৪ জন নেতাকর্মী এই ভয়াবহ, নৃশংস, নিষ্ঠুর-নির্মম গ্রেনেড হামলায় মারা যান। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর দুই কান ও চোখ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপূরণীয় ক্ষতি হয় তার শ্রবণশক্তির। অলৌকিকভাবে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন তিনি।
শেখ হাসিনা তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। বিএনপি সরকারের সন্ত্রাস-দুর্নীতি বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল।একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ চলছিল। সমাবেশে শেখ হাসিনা বক্তব্য শুরু করেন ৫টা ২ মিনিটে। ২০ মিনিটের বক্তব্য শেষে ৫টা ২২ মিনিটে ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে মাইক ছেড়ে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় একজন সাংবাদিক তাঁকে ছবির জন্য একটি পোজ দিতে অনুরোধ করেন। তখন শেখ হাসিনা আবারও ঘুরে দাঁড়ান। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই দক্ষিণ দিক থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে একটি গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয়। গ্রেনেডটি ট্রাকের বাঁ পাশে পড়ে বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেখ হাসিনা ট্রাকের ওপর বসে পড়েন। তার সঙ্গে থাকা অন্য নেতারা এ সময় মানবঢাল তৈরি করে তাকে ঘিরে ফেলেন। প্রথম গ্রেনেড হামলার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ট্রাক লক্ষ্য করে একই দিক থেকে পর পর আরও দুটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। বিকাল ৫টা ২২ মিনিট থেকে এক-দেড় মিনিটের ব্যবধানে ১৩টি বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। তখন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া,আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম,নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর (অব.) শোয়েব,ব্যক্তিগত স্টাফ নজীব আহমেদসহ দেহরক্ষীরা শেখ হাসিনাকে ধরে ট্রাক থেকে দ্রুত নামিয়ে তার মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে তুলে দেন।
গ্রেনেড হামলা থেকে কোনোভাবে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যেন প্রাণ নিয়ে ফিরতে না পারেন, তার সব চেষ্টায়ই করেছিল হামলাকারীরা। তাঁর গাড়ির কাচে কমপক্ষে সাতটি বুলেটের আঘাতের দাগ, গ্রেনেড ছুড়ে মারার চিহ্ন এবং বুলেটের আঘাতে পাংচার হয়ে যাওয়া গাড়ির দুটি চাকা সে কথাই প্রমাণ করে।
এটি ছিল একেবারে ঠান্ডামাথায় হত্যার পরিকল্পনা। তিন স্তরের বুলেট নিরোধক ব্যবস্থাসম্পন্ন মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটিই সেদিন শেখ হাসিনার প্রাণ বাঁচিয়েছে বলে তার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, গ্রেনেড আক্রমণ ব্যর্থ হলে নেত্রীকে হত্যার বিকল্প পন্থা হিসেবে বন্দুকধারীদের তৈরি রাখা হয়। আর এই বন্দুকধারীরাই খুব হিসাব কষে নেত্রীর গাড়ির কাচে গুলি চালায়। এই গুলি বুলেটপ্রুফ কাচ ভেদ করতে ব্যর্থ হলে তারা গাড়ি লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। কিন্তু এই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। সব শেষে গাড়ির চাকা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে থামানোর চেষ্টা করা হয়। এ অবস্থায় গুলির আঘাতে গাড়ির বাঁ পাশের সামনের ও পেছনের দুটি চাকা পুরোপুরি পাংচার হয়ে গেলেও চালক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই গাড়িটি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ধানমন্ডির সুধা সদনে নিয়ে যান।
ঘটনার পর ওই জায়গাটি যেন হয়ে পড়েছিল ‘কারবালা প্রান্তর। বিস্ফোরণের শব্দ,আহতদের চিৎকার-আহাজারি, রক্তাক্ত নেতাকর্মীদের ছুটোছুটিতে পুরো এলাকা বিভীষিকায় হয়ে ওঠে। চারদিকে ছোপ ছোপ রক্ত আর মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ। দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আহতদের সহায়তা ও হাসপাতালে নেওয়ার কাজে এগিয়ে এলেও পুলিশ সাহায্য করেনি। এখন আমরা জানি, কারা ছিল সেই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রকারী। তারেক জিয়ার নেতৃত্বে গ্রেনেড হামলা ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত বৈঠক হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিকল্প ক্ষমতাকেন্দ্র হাওয়া ভবনে। হামলার পেছনে বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের প্রত্যক্ষ ইন্ধন ও চক্রান্ত ছিল। হামলার ব্যাপারে আর্থিক ও প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারেক, বাবর ও পিন্টু। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে একজন সাধারণ ফল বিক্রেতা জজ মিয়াকে দিয়ে হামলার দায় স্বীকার করানো হয়।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত এই মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের ফাঁসি এবং তারেক রহমান, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। বাকি ১১ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যেমন সন্দেহ নেই, তেমন ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাও খালেদা জিয়ার অগোচরে হয়েছে তা বিশ্বাস করা কঠিন। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার পুত্র তারকে জিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহার ও দূর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। অথচ তারা ভুলে গেছে মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান খালেদা জিয়াকে ঘরে তুলতে চায়নি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেষপর্যন্ত জিয়া তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে। সেই খালেদা জিয়া জাতির জনকের শাহাদাত বার্ষিকীতে মিথ্যা জন্মদিন পালন করে কেট কাটেন। একটা মানুষের কয়টা জন্মদিন থাকতে পারে? ম্যাট্রিকুলেশন সনদ অনুযায়ী বেগম জিয়ার জন্মদিন ৯ আগস্ট ১৯৪৫; বিবাহ সনদে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫, পাসপোর্ট সনদে ১৯ আগস্ট ১৯৪৫। অবশেষে করোনা টেস্টের জন্য দেয়া তথ্যে জানা গেল খালেদা জিয়ার জন্মদিন ৮ মে, ১৯৪৬।
অকৃতজ্ঞতা, সীমাহীন মিথ্যা এবং হত্যা ও ষড়যন্ত্র যাদের রাজনীতির ভিত্তি, একদিন না একদিন জনগণের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়। ক্ষমতার লোভে তারা ভুলে যায়, সত্য কখনো চিরকাল চাপা থাকে না।ইতিহাস তাদের ক্ষমা করে না, আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেয়।

লেখক: মো: আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ।

https://channelkhulna.tv/

খোলামত আরও সংবাদ

‘ছাত্ররা আমার কথা শুনলো না, শুনলো ভুট্টো সাহেবের কথা’

প্রিয় মানুষকে অনুকরণ এবং অনুসরণের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে

সহনীয় মূল্যে ইলিশ : মডেল উদ্ভাবন

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ভিন্ন বাংলাদেশ, ক্রীড়াঙ্গনেও সফলতা

আরেক অর্জন: নিয়ন্ত্রিত হতে যাচ্ছে দ্রব্য মূল্য

পিতার অপমানের দায় কন্যাকেই নিতে হবে

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।