বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ আবু নাসেরের জন্ম ১৯২৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক পাখি ডাকা, ঘাসে ঢাকা, সবুজ শ্যামল নিভৃত পল্লীতে। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা বেগম। বাংলাদেশের স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বড় ভাই। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট চাচা। ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পরপরই তিনি ব্যবসায়ীক কারনে শিল্প ও বাণিজ্য নগরী খুলনা চলে আসেন। তখন থেকেই তার খুলনায় বসবাস। তিনি ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী। অল্প বয়স থেকেই ব্যবসা করতেন তিনি। ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে যখন গ্রেফতার হন তখনকার গোয়েন্দা নথিতে দেখা যায় শেখ আবু নাসের বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ছোট ভাই, যার পেশা হিসেবে দেখানো হয়েছে ব্যবসা। গোয়েন্দা নথি অনুসারে তিনি তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। ছোটবেলায় তার টাইফয়েড রোগ হয় এবং একটি পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারনে কেউ কেউ তাকে তৈমুর লং বলেও ডাকতেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বিশেষ করে তিনি যখন জেলে অন্তরীণ থাকতেন সেসময় আবু নাসের পিতৃস্নেহে বঙ্গবন্ধুর ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনা করতেন। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেই এ বিষয়ের অবতারণা করেছেন এভাবে- “আমার ছোট ভাই নাসের ব্যবসা শুরু করেছে খুলনায়। সে আমার ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনা করে। বাড়ি থেকে তার কোন টাকা পয়সা নিতে হয় না। লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। মাঝেমাঝে কিছু টাকা বাড়িতে দিতেও শুরু করেছে।” বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্য থেকেই বুঝা যায় বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অল্প বয়সেই (১৯৫২ সালে যখন তার বয়স মাত্র ২৩-২৪ বছর) তিনি কতটা দায়িত্বশীল ছিলেন। ১৯৫৭ সালে শেখ আবু নাসের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বেগম রাজিয়া নাসের ডলির সাথে। বেগম রাজিয়া নাসের ডলি ছিলেন একজন মেধাবী, সংস্কৃতমনা এবং সুদর্শনা নারী। তিনি পাবনার বিখ্যাত হেরাজ ম্যানসনের মালিক হেরাজ বিশ্বাসের কন্যা। হেরাজ বিশ্বাসের পরিবার তখন খুলনায় থাকতেন। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কর্মসূচীতে খুলনায় আসলে বেশিরভাগ সময় ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের বাসায় উঠতেন। তার খুলনার নূরনগরস্থ বাড়িটি ছিল আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে তিনি খুলনা অঞ্চলে আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার অপরাধে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী, তখন শেখ আবু নাসেরের সকল ব্যবসা ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তান আর্মি। বিশ্বাস সিরাজুল হক পান্না (পান্না বিশ্বাস), লালু, ইসমত কাদির গামা সহ যেসব ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন তাদের সাথে সরকারি ছাত্র সংগঠন এন এস এফ এর অসংখ্য বার সংঘর্ষ হয়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণার পর থেকে পান্না বিশ্বাস সহ অন্যান্য ছাত্রলীগের নেতারা গোপনে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এ সময় ঢাকা থেকে শেখ আবু নাসের টুঙ্গিপাড়ায় এসে উপস্থিত হন। গ্রামে ফিরে এসে তিনি যুবকদের সংগঠিত করেন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারনের চেষ্টা চালান। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালও এখানে এসে কেড়াইলকোপা গ্রামের সাবেক ই পি আর সদস্য কাজী মোস্তফা ও সেনা সদস্য রাসেক কে সাথে নিয়ে যুবকদের সংগঠিত করেন। ধানমন্ডি- ৩২ থেকে শেখ জামাল পালিয়ে গেলে তাকে খুঁজতে হানাদার বাহিনী ১৯ মে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে হানা দেয়। এ সময় তারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ী জ্বালিয়ে দেয় এবং নির্মম ভাবে গ্রামের ছয় জনকে গুলি করে হত্যা করে। শেখ বাড়ীর শেখ বোরহান উদ্দিনকে পাক বাহিনী ধরে ফেলে। তার ফুফু পাক বাহিনীর কমান্ডার কে কাজের ছেলে বলে ছাড়িয়ে রাখে। এ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর মা ও বাবা কে মৌলভী আব্দুল বারী বিশ্বাসের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঐ বাড়ী নিরাপদ না হওয়ায় কিছুদিন পর সেখান থেকে ঝিলু বিশ্বাসের বাড়ীতে আশ্রয় নেন তারা। এরপর মুক্তিযুদ্ধ যখন তুঙ্গে হেমায়েত বাহিনীর দুই সদস্য আলম ও ফারুখ তাদের কে শিবচরে ইলিয়াস চৌধুরীর বাড়ীতে রেখে আসে। প্রায় মাসখানেক পর শেখ আবু নাসের ৭১ সালের ২৪ শে জুন পান্না বিশ্বাস সহ ভারতে চলে যান। তাকে ভারতের ৯নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টার ২৪ পরগনাস্থ টাকির গাঙ্গুলী বাড়িতে নিয়ে যান তারই ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। সেখানে তার সাথে প্রায় দেড় মাস থাকেন এবং তাকে দেখাশোনা করেন পরবর্তীতে ৯নং সেক্টরের অধীন বৃহত্তর বরিশাল সাব সেক্টরের টু আই সি আব্দুল হক বীরবিক্রম।
আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং আব্দুল হক বীরবিক্রম উভয়ের বাড়ি বরিশালের গৌরনদীতে হওয়ায় তাকে মামা শেখ নাসেরের দেখাশুনার দায়িত্ব দেন জনাব সেরনিয়াবাত। শেখ আবু নাসের সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আব্দুল হক বলেন- “অমায়িক ব্যবহার ছিল তার, কম কথা বলতেন। সারাদিন রেডিওতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবর শুনতেন, যুদ্ধের অগ্রগতি জানতে চাইতেন। বঙ্গবন্ধুর জন্য সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতেন। বাংলাদেশে থাকা তার স্ত্রী সন্তানদের জন্যও চিন্তা করতেন।” আব্দুল হক বীরবিক্রম তাকে চাচা ডাকতেন। শেখ নাসের ও তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। প্রতিবেলায় শেখ নাসের তাকে একসঙ্গে নিয়ে খেতেন। ১৯৭১ সালের ৬ ই আগষ্ট আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ৯ নং সেক্টর পরিদর্শন করেন এবং তাকে সেখান থেকে টাকি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যান। ভারতের টাকি ক্যাম্পে প্রশিক্ষন শেষে শেখ আবু নাসের ও পান্না বিশ্বাসকে ভারতীয় সেনা বাহিনীর ক্যাপ্টেন শেপা বাগুন্ডিয়া ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে বাগেরহাটের সাহসি মুক্তিযোদ্ধা সামশু মল্লিক সহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি চিতলমারী দিয়ে বাগেরহাটে প্রবেশ করেন তিনি। বাগেরহাটের মাধবকাঠি মাদ্রাসায় পাক সেনাদের সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। রাতে শুরু হওয়া যুদ্ধ চলে দুপুর পর্যন্ত। এ সময় আশপাশের লোকজন তাদেরকে শুকনা খাবার দিয়ে যায়। যুদ্ধে পাক বাহিনী পরাজিত হয় এবং শেষে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি সুন্দরবন এলাকাতে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কারন টুঙ্গিপাড়ায় বড় ধরনের কোন যুদ্ধ হয়নি। সে সময় এ অঞ্চল ছিল দূর্গম। এ কারনে হানাদার বাহিনী নদী দিয়ে গানবোট নিয়ে টহল দিত। এ অঞ্চলের যোদ্ধারা তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৪ ই আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে যশোর হয়ে খুলনা আসার উদ্দেশ্যে শেখ আবু নাসের তেজগাঁও বিমানবন্দরে চলে আসেন। কিন্তু পরদিন অর্থাৎ ১৫ ই আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রাম থাকায় বঙ্গবন্ধু খবর পাঠিয়ে তাকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়িতে ফেরত আসতে বলেন। এ কারনে তিনি খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা না হয়ে আবার বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাসভবনে ফিরে যান। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! ঐ রাতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে।
দেশবিরোধী খুনীচক্র বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র ১১ বছরের শিশু শেখ রাসেল, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব এবং পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর একমাত্র কনিষ্ঠ ভ্রাতা শেখ আবু নাসেরকেও হত্যা করে। ভোর রাতে ঘটা ইতিহাসের এই নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ঘটনা বেগম রাজিয়া নাসের জানতে পারেন সকাল ৬ টায় টেলিফোন বাজার শব্দে ঘুম ভাঙার পর। বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য, বাঙালির আজন্ম লালিত একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু টানা প্রায় সাড়ে ৯ মাস পাকিস্তানের কারাগারে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন, দু দু’বার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন। তাকে কোন বাঙালী হত্যা করতে পারে এমনটি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বেগম রাজিয়া নাসের। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল বেগম রাজিয়া নাসেরের। স্বামী হারানোর শোক, আতঙ্ক আর চরম নিরাপত্তাহীনতায় অস্থির সময় কাটতে থাকা রাজিয়া নাসের শুনতে পেলেন ১৬ ই আগস্ট সকালে বঙ্গবন্ধুর লাশ টুঙ্গিপাড়ায় আনা হচ্ছে দাফনের জন্য। ভেবেছিলেন তার স্বামী শেখ আবু নাসেরের লাশও হয়ত আনা হবে। স্বামীর লাশ একনজর দেখা এবং দাফনে অংশগ্রহণ করার জন্য ৭ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা বেগম রাজিয়া নাসের নাবালক সন্তানদের নিয়ে লঞ্চে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গিয়েছিলেন টুঙ্গিপাড়ায়। কিন্তু খুনীচক্রের বাধায় বেগম রাজিয়া নাসেরের লঞ্চ ঘাটে ভিড়তে পারেনি। খুলনায় ফিরে স্বামী শেখ আবু নাসেরের বাসায় ও ঢুকতে পারেননি বেগম রাজিয়া নাসের। কারন ততক্ষণে বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী গঠিত খুনীদের পৃষ্ঠপোষক অবৈধ সরকার শেখ আবু নাসেরের বাড়ি সিলগালা করে দিয়েছে। ফলে চলে যান বাবা হেরাজ বিশ্বাসের বাড়িতে। কিন্তু সেখানেও বেশিদিন থাকতে না পেরে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে চলে যান পাবনায় দাদার বাড়িতে। সেখানেও সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন। শেখ আবু নাসেরের জ্যেষ্ঠ পুত্র বর্তমান বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য জননেতা শেখ হেলাল উদ্দীন ছিলেন তখন ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের দশম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। খুনীচক্রের একটি দল সেখানে গিয়ে শেখ হেলালকেও উঠিয়ে এনে হত্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্যাডেট কলেজের প্রিন্সিপ্যালের দৃঢ়তায় সেদিন শেখ হেলাল প্রাণে বেঁচে যান।
এভাবে একের পর এক বৈরী পরিবেশ মোকাবিলা করতে হয়েছে শেখ আবু নাসেরের পরিবারকে। সরকারের নির্দেশে শেখ আবু নাসেরের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয় এবং সকল ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।ফলে নিদারুণ অর্থ কষ্ট ও একসময় ভোগ করতে হয়েছে এই পরিবারকে। কিন্তু জীবন সংগ্রামী বেগম রাজিয়া নাসের একের পর এক বাঁধা আর প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করেছেন ধৈর্য আর সাহসের সম্মিলন ঘটিয়ে।
নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের ৬০’র দশকের সাধারন সম্পাদক সাত্তার মোল্লা ওরফে বেদুইন সাত্তার ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত কাছের মানুষ।বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে তার আসা যাওয়া ছিল নিয়মিত। বঙ্গবন্ধু পরিবার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন- “শেখ আবু নাসের ছিলেন অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ। তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে খাওয়াতেন।” ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়া সত্ত্বেও তার চলাফেরা ও জীবনযাপন ছিল অতি সাধারন। শহীদ শেখ আবু নাসের আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন আদর্শিক রক্তের যোগ্য উত্তরসুরি পাঁচ পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানকে। জ্যেষ্ঠ পুত্র দক্ষিণবঙ্গের আওয়ামী রাজনীতির অভিভাবক জননেতা শেখ হেলাল উদ্দীন এমপি। ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রিয় সাংসদ শেখ হেলাল দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তার চেহারার সাদৃশ্য থাকায় তাকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিরুপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দ্বিতীয় পুত্র শেখ সালাউদ্দীন জুয়েল খুলনা-২ আসনের নির্বাচিত জনপ্রিয় সাংসদ। মাদকমুক্ত সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত তিলোত্তমা খুলনা গড়তে নিষ্ঠার সাথে কাজ করছেন তিনি। করোনা মহামারীতে অসহায় কর্মহীন মানুষকে মানবিক খাদ্য সহায়তা, অর্থ সহায়তা এবং ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থা করে তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। তৃতীয় পুত্র শেখ সোহেল উদ্দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হিসেবে দীর্ঘবছর ধরে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম প্রেসিডিয়াম মেম্বর হিসেবে যুবলীগকে সংগঠিত করছেন তিনি। খুলনার মানুষের কাছে শেখ সোহেল এক আস্থার নাম। করোনা মহামারীতে যিনি হাজার হাজার মানুষকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা, ফ্রি অক্সিজেন সেবা এবং ফ্রি টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।
শহীদ শেখ আবু নাসেরের নামে বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘ শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল’ থেকে পুরো দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ বিনা খরচে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা ভোগ করছে। খুলনায় স্থাপিত আন্তর্জাতিক মানের ‘শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম’ টি এই এলাকার ক্রিকেটের উন্নয়নে অনবদ্য ভূমিকা রাখছে। এই স্টেডিয়ামটি ও শেখ আবু নাসেরের ভাতিজি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অবদান। ক্রিকেট অঙ্গনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন শেখ সোহেল। দল, মত নির্বিশেষে খুলনার ছাত্র ও যুবসমাজের নয়নের মণি, গরীব, দুখী, অসহায় মানুষের বিপদের বন্ধু শেখ সোহেল। শেখ আবু নাসেরের চতুর্থ পুত্র শেখ জালাল উদ্দিন রুবেল এবং শেখ বেলাল উদ্দিন বাবু সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে না থাকলেও খুলনার ছাত্র ও যুবকদের সাথে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। নৌপরিবহন ব্যবসায়ী শেখ রুবেলের সমগ্র খুলনায় রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। বাগেরহাট-২ আসনের জনপ্রিয় সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় হলেন শেখ আবু নাসেরের পৌত্র। সারাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে দারুণ জনপ্রিয় অল্পবয়সী এই সুদর্শন সাংসদ। বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকান্ডের মাধ্যমে এলাকাবাসীর নজর কেড়েছেন তিনি। “শেখ পরিবার” খুলনার মানুষের জন্য আশির্বাদ। এই পরিবারটি ইতিমধ্যে খুলনা, বাগেরহাটবাসীর কাছে ‘মানবিক পরিবার’ হিসেবে মানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে। অথচ ঘাতকের নির্মম বুলেটে বিদ্ধ হয়ে শাহাদাৎ বরণ করেছেন এই পরিবারের অভিভাবক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পঙ্গু বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের সহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য! স্বজন হারানো সদস্যরা দীর্ঘ ২১ বছর এই জঘন্যতম হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ার অধিকারটুকু পর্যন্ত পায়নি!! এতটা নির্মমতা, পৈশাচিকতা, নিষ্ঠুরতা এবং অমানবিকতার শিকার হয়েও মানবিকতার জয়গাণ গেয়ে চলেছে পরিবারটি। তাদের নেতৃত্বেই এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আইনের শাসন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ আবু নাসের এর ৯৩ তম জন্মবার্ষিকীতে তাকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। বিদেশে পালিয়ে থাকা তার খুনিদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া বঙ্গবন্ধু এবং শহীদ শেখ আবু নাসের সহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ সদস্যের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট ও তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা, খুলনা।