চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃনিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনকে , লোকসান বহন করে মিল চালু রাখা সম্ভব নয়, রাষ্ট্রায়ত্ব পাট কলের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী ও শ্রমিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিজেএমসির চেয়াম্যান শাহ মোহাম্মদ নাছিম।গতকাল দুপুরে খালিশপুর জুট মিলের বোর্ড সভা ও পাট ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকেদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার পাটকলের ব্যাপারে অনেক আন্তরিক। তবে প্রতি বছর পাটখাতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া কারোর পক্ষে সম্ভব না। তাই সরকারের কাছে আমরা অফেরতযোগ্য এক হাজার কোটি টাকার একটি আবর্তক তহবিল চেয়েছি পাট ক্রয়ের জন্য। যা প্রতি বছর প্রতি মিলে পাট ক্রয়ের জন্য দেওয়া হবে। আবার উৎপাদিত পণ্য বিক্রির পর মিলের অর্থ থেকে কেটে নিয়ে আবর্তক তহবিল পূরণ করা হবে। ফলে এ তহবিল মজুদ থাকবে সব সময়। সেজন্য সরকারের কাছে এ তহবিল চাওয়া হয়েছে।
পাটকলের বর্তমান মেয়াদ উত্তীর্ণ যন্ত্রপাতি দিয়ে আগের মতো উৎপাদন পাওয়া সম্ভব না, যে কারণে বিএমআরই করার জন্য চীনের সাথে চুক্তি করার প্রচেষ্টা চলছে। সকল মিল বিএমআরই হলে উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে। মিল লাভজনক করা তখন আর কঠিন কিছু হবেনা বলে তিনি জানান।
বর্তমান পাটক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পাট ক্রয়কেন্দ্র খুলে পাট ক্রয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাট ব্যবসায়ীদের ৪৫১ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। যা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করে বর্তমান বকেয়া ৩৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ৮৭ কোটি টাকা আমি দায়িত্ব নেয়ার পর পরিশোধ করেছি। পাটকলগুলোর সাথে যে ব্যবসায়ীরা বর্তমান আছেন তাদের সিংহভাগ অর্থে পাটসহ খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ হচ্ছে। তাদের এ অর্থ নিয়মিত ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থাও হবে বলে তিনি জানান।
বুধবার সকাল ১০টায় খালিশপুর জুট মিলের এন্টারপ্রাইজ বোর্ডের সভায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ মোস্তফা কামাল আহমেদ, হিসাব বিভাগীয় প্রধানসহ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বোর্ডের মিটিং শেষে তিনি পাট ব্যবসায়ী, সিবিএ নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় পাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম বাশার, খুচরা যন্ত্রাংশ সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ইমরুল ইসলাম, সিবিএর সভাপতি দ্বীন ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ ইব্রাহিমসহ নেতৃবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, তিনি পাটের অভাবে ঝিমিয়ে পড়া উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে পাটক্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মিল পরিদর্শনে গত সোমবার তিনি ঢাকা থেকে আসার পথে খানখানাপুর ও কানাইপুর পাট ক্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন। বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত শেষে খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের গেস্ট হাউজে রাত্রিযাপন করেন। বিজেএমসির জিএম জুট ও জিএম উৎপাদন তার সাথে ছিলেন। গত মঙ্গলবার সকাল ৯টায় প্লাটিনাম জুট মিলের বোর্ড সভায় যোগ দেন। এরপর তিনি মিলের কর্মকর্তা ও সিবিএর সাথে মতবিনিময় করেন। মিলের বিদ্যালয় পরিদর্শন করে লেখাপড়ার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন তিনি। বিকেলে তিনি ক্রিসেন্ট জুট মিল পরিদর্শনকালে মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মিলের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। মিলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। সন্ধ্যায় প্লাটিনাম জুট মিলের রেস্ট হাউজে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলাপ্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় পাটখাতকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। ২৯ আগস্ট তিনি যশোর জুট ও কাপের্টিং মিল পরিদর্শন করবেন। ৩০ আগস্ট ফরিদপুরে পাট ক্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে তিনি ঢাকা ফিরবেন।