বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক গৃহ পরিচারিকা গৃহ মালিকের স্ত্রী কর্তৃক মধ্যযুগীয় কায়দায় সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতনের ঘটনায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ধরে নির্যাতনের শিকার পিপাসা খান (৩৫) উপজেলার পদ্মডাঙ্গা গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ খানের মেয়ে। একই উপজেলার দক্ষিণ আমবাড়ি গ্রামের বিষ্ণুপদ রায় তার ঢাকার বাসায় গৃহ পরিচারিকার কাজে নেওয়ার পর তার স্ত্রী রতœা রায় কৃর্তক এ অত্যাচার ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পিপাসা খানের ঘনিষ্ট জনেরা জানায়, প্রায় দুই বছর পূর্বে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি পিপাসা খান ও তার ছেলে বিদ্যুৎ (১৫) কে ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার কথা বলে ঢাকার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে পিপাসাকে দিয়ে বাসার কাজ ও বিদ্যুৎকে দিয়ে বিষ্ণুপদ রায়ের অফিসের কাজ করান। তাদেরকে বিনা-বেতনে কেবল পেটে ভাতে কাজ করান। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী পিপাসা খান বাসার কাজ ভালভাবে করতে না পারায় বিষ্ণু রায়ের স্ত্রী রতœা রায় তাঁকে দ্বগদ্বগে খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দেয়, যাতে দ্বগ্ধ হয়ে মারাতœক ক্ষত সৃষ্টি হয়। এর পরও সঠিকভাবে কাজ করতে না পারায় মাথার চুল কেটে ফেলাসহ অনুরূপ নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতনের খবর যাতে গ্রামের বাড়ি বা আপনজন কাউকে জানাতে না পারে সেজন্য কেড়ে নেওয়া হয় তার ব্যবহৃত মোবাইল। বন্ধিদশায় রেখে কেবল শ্রম নেওয়ায় মেতে ওঠে রতœা রায় ও তার স্বামী বিষ্ণুপদ রায়। দীর্ঘ দিনের এহেন সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতনে ভুগে জীবন্ত কঙ্কালে রূপ নিয়েছে পিপাসা খান। নিজে কথা বলার শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলায় নিশ্চিত মৃত্যু হবে শঙ্কায় এবং দায় এড়াতে সিদ্ধান্ত নেয় বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার। সে মোতাবেক কোন চিকিৎসা না করিয়ে বিষ্ণুপদ রায়ের ঘনিষ্ট জৈনক কৃষ্ণ আদুয়ার মাধ্যমে বাড়িতে ফিরিয়ে দেয় ক্ষত-বিক্ষত পিপাসা খানের জীবন্ত কঙ্কাল। শক্তি নেই উঠে দাড়াবার এমনকি কথা বলার। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন সহ অবস্থা সংকটাপন্ন। কেবল চোখ খুলতে পারে অনেক কষ্টে, যেন শেষ ঘুম পড়বে এক্ষুণি। নির্যাতনে এমনই বিধ্বস্থ পিপাসা খানকে গত সোমবার ফিরে পেয়ে পরিবারের লোকজন প্রথমে নিয়ে যান মোল্লাহাট থানায়। এরপর থানা পুলিশের পরামর্শে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। গত সোমবার হতে এখন পর্যন্ত মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী পিপাসা খান। ।
নির্যাতনের বিষয় বিষ্ণুপদ রায় মুঠোফনে জানান, এ ধরনের ঘটনা মিথ্যা ভিত্তিহীন। গ্রামে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাকে এবং আমার পরিবারকে ফাঁসানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছে। পিপাসা আমার ঢাকার পল্লবীর বাসায় ৬ তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়, এতে সে আহত হয়। আহত হলে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে অবস্থার উন্নতি হলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। গত ২ থেকে তিন বছর সে এবং তার ছেলে আমার বাসায় কাজ করে আসছিল, তাদের আমি নিয়মিত মাসিক বেতন ও দিয়েছি।
মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জব্বার ফারুকী জানান, পিপাসা খান যখন আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হণ, তখন তিনি কথা বলতে পারছিলেননা। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন সহ মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে। তার শরীরিক অবস্থা এতটায় দুর্বল যে তিনি দাড়াতেও পারছেন না। আমরা সাধ্যমত তার চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স চয়নিকা জানান, পিপাসা খানের শরীরে অনেকগুলো পোড়া/ছ্যাকার ক্ষতসহ মাথার চুল কাটা রয়েছে। মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে পেয়েছি। আমরা সাধ্যমত তার চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।
মোল্লাহাট থানার অফিসার ইনচার্জ সোমেন দাশ জানান, মারাত্মক অসুস্থ্য অবস্থায় তার কাছে পিপাসা খানকে নিয়ে এসেছিল। আমি তাৎক্ষণিক মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। ঘটনা যেহেতু ঢাকায় ঘটেছে সেহেতু আমার আইনগত কিছু করনীয় নাই এবং সে কারণে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চাইনা।