১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কতৃক জম্মু কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের উপর সংগঠিত ইতিহাসের বর্বরতম নৃশংস ঘটনার স্মরণ করে ‘কালো দিবস’ পালন করেছে সামাজিক সংগঠন কনফিডেন্সে দারিদ্র বিমোচক কল্যাণ সংস্থা
শুক্রবার ( ২২ অক্টোবর) খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে ‘কালো দিবস’ উপলক্ষে “ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায়” ১৯৪৭ হতে ১৯৭১, জম্মু কাশ্মীর এবং বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবী ও চলমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন পথসভা ও মোটর বাইক র্যলী করে সংগঠনের সদস্যরা।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, ১৯৪৭ এ ভারত থেকে সাম্প্রদায়িক চেতনায় পাকিস্তানের সৃষ্টি। পাকিস্তান ঐ চেতনা থেকেই আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে লালন করছে। ১৯৪৭ সালে জম্মু কাশ্মীর এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী জঘন্যতা গণহত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তান আজও প্রকাশ্যে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি। এছাড়াও পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের প্রেত্মাতারা আজও বিভিন্ন রাষ্ট্রে জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের প্রেত্মাতারা দেশের সম্প্রীতি বিনষ্টে এখনও তৎপর। অসম্প্রদায়িক চেতনাবোধের প্রত্যেকটি নাগরিক এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, সাম্প্রতিক কালে কুমিল্লায় নানুয়া দিঘীর পাড় পূজামণ্ডপে মূর্তির রাণের উপর পবিত্র কোরআনুল কারীম রাখাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর যে হামলা হয়েছে তা অপ্রত্যাশিত এবং এর ঘটনার সাথে অতীতের সকল সাম্প্রদায়িক তাণ্ডবের যোগসূত্র রয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দ ও প্রতিবাদ করছি। তাছাড়াও সাম্প্রদায়িক তৎপরতার সাথে পাকিস্তানসহ বিএনপি জামাতের যোগসাজশ আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখার জন্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিও আহবান করেন।
কনফিডেন্সে দারিদ্র বিমোচক কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান ডা.মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রায়হান এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন এস,এম,নুর হাসান জনি,
সহকারী সম্পাদক খুলনা প্রেস ক্লাব, শাহীন জামান পন,সাধারণ সম্পাদক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট,
দৌলতপুর থানা শাখা ও অমিত কুমার বসু, বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদের গভঃ কমিটির সদস্য। অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কনফিডেন্স দারিদ্র্য বিমোচন কল্যাণ সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান রোমানা আক্তার,জেনারেল সেক্রেটারি তাপস কুমার রায়, অনুরুদ্ধ কুমার বাহাদুর,মোঃ মনিরুজ্জামান মনির, সুরজিৎ ঢালী,শেখ ইসলামুল হক সহ সংগঠনের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানটিতে ‘অপারেশন গুলমার্গ’-এর নৃশংসতা তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অভিযানের নামে পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বরতার ছবিও স্থান পায়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন ও জাতির জনকের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা, ৩ নভেম্বরের জেল হত্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এর সবকিছুর পিছনেই রয়েছে পাকিস্তান নামক সন্ত্রাসী রাষ্ট্রটি।
১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর কাশ্মীর দখলে নিতে ‘অপারেশন গুলমার্গ’ নামে একটি নৃশংস অভিযান চালায় পাকিস্তান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে উপজাতীয় জঙ্গিদের সেই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের লাখ লাখ হিন্দু-মুসলিম-শিখ রুখে দাঁড়িায়। ওই অভিযানে ৪০ হাজার কাশ্মিরী মুসলিম, হিন্দু, শিখ প্রাণ হারায়। ১০ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হন এবং ২ হাজার নারীকে জোরপূর্বক পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই অনুষ্ঠানে সমগ্র এশীয় উপমহাদেশে সহিংসতা ও সন্ত্রাস ছডা়নোর জন্য পাকিস্তানের কুৎসিত পরিকল্পনার উন্মোচন করা হয়। এই ঘটনাটি বাংলাদেশে পাকবাহিনীর “অপারেশন সার্চলাইট” নামে ১৯৭১ সালের গণহত্যা পরিচালনার সমান্তরাল ছিল। প্রতিবাদ সমাবেশে একই বর্বর শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে পাকিস্তানিরা একাত্তরের এ দেশের বীর মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের নিজের পুরুষ ও মহিলাদের গণহত্যা ও নির্যাতন করেছিল।
১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর নৃশংস পাকবাহিনী ও তার কাশ্মীরি দোসর দ্বারা ৪০,০০০ এরও বেশি কাশ্মীরি মুসলমান, শিখ এবং হিন্দু হত্যা করে। প্রায় ১০,০০০ নারী ধর্ষিত হয় এবং ২০০০ জন নারীকে জোর করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওযা় হয়।
১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর কাশ্মীরে পশতুন উপজাতিদের হত্যাকাণ্ডের এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চিত্র তুলে ধরার পোস্টার এবং ব্যানার প্রদর্শন করা হয়।
কাশ্মীরের অসহায় নাগরিকের উপর ২২ শে অক্টোবার ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সমর্থিত প্রায় ২০০০ আদিবাসী মিলিশিযা়দের দ্বারা সংঘটিত অত্যাচার চিহ্নিত করার জন্য, সেই দিনটি সারা বিশ্বে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৪৭ সালের উপজাতীয় সেই আক্রমণ রাতারাতি ঘটেনি, এটি কৌশলগতভাবে পাকিস্তান পরিকল্পনা করেছিল। যেমন হানাদারদের দ্বারা বড় ধরনের অত্যাচার করা হয়েছিল, বেসামরিক লোকদের লুট করা হয়েছিল, এমনকি হাসপাতালগুলিও রেহাই পায়নি সেইরকমই আক্রমণকারীদের বীর কাশ্মীরিরা প্রতিরোধ করেছিল যারা শ্রীনগর বিমানবন্দর দখলের পাকিস্তানি হানাদারদের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করেছিল।
ধ্বংসের সেই পটভূমিতে, জম্মু ও কাশ্মীরের রাজা মহারাজা হরি সিং ভারত সরকারের কাছে সমর্থন চেয়েছিলেন এবং তার রাজত্বকে পাকিস্তান এবং তার হিংস্র হানাদারদের দ্বারা লুণ্ঠিত হতে বাঁচাতে ভারতের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ভারতীয় সেনারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরকে সুরক্ষিত করে। কুঠার, তলোয়ার এবং বন্দুক দিয়ে সজ্জিত হাজার হাজার ‘লস্কর’ দেরকে ভারতীয় সেনারা পিছাতে বাধ্য করে। এটি ছিল ২৭ শে অক্টোবর, ১৯৪৭। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম পদাতিক বাহিনীর শিখ সৈন্যরা শ্রীনগর বিমানবন্দরে অবতরণ করে এবং কাশ্মীরকে অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে মুক্ত করার লড়াই শুরু করে।