মোঃ এনামুল হক :: মোংলা বন্দরের পশুর নদীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন একটি চোরাচালান সিন্ডিকেট চক্র। বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা এ চক্রটি দিনে-রাতে দেদারছে পাচার করছেন মূল্যবান বিভিন্ন মালামাল। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সময়ে নানা জায়গা থেকে চোরাকারকারীদের বিদেশী জাহাজ হতে পাচারকৃত মালামাল উদ্ধার হলেও ধরা ছোঁয়ার বাহিরেই থেকে যাচ্ছেন চক্রের সদস্যরা। এ চোরাচালানীদের কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া শিপ চ্যান্ডেলার্স ও কাস্টমসের দেয়া ভেন্ডর লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা যেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, তেমনি সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সিন্ডিকেট চক্রের চোরাচালান রোধ ও দৌরাত্ম বন্ধে বন্দর এবং কাস্টমসের বৈধ লাইসেন্সধারীদের ব্যবসায়ী সংগঠন প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একের পর এক লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসছেন। তবে সে সকল অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তেমন কোন তৎপরতা না থাকায় দিনকে দিন আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছেন এ চক্রটি। তবে তৎপর রয়েছেন কোস্ট গার্ড।
চোরাচালান রোধে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা কাস্টমস হাউস, কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সদর দপ্তর, ডিআইজ (খুলনা), বাগেরহাট পুলিশ সুপার, বাগেরহাট পিবিআই ও নৌ পুলিশের উর্ধতন কর্মকতার্ বরাবর মোংলা বন্দর কাস্টমস ভেন্ডর এ্যাসোসিয়েশনসহ বন্দরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের দেয়া লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, মোংলা বন্দরে আগত বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে সার্বক্ষণিক কাস্টমসের রামেজ টিম থাকার কথা থাকলেও মুলত তারা না থাকার কারণেই চোরাকারবারীরা জাহাজ থেকে বিভিন্ন মুল্যবান মালামাল পাচারের সুযোগ পাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে কাস্টমসের রামেজ কর্মকর্তারা জাহাজ আসার পর তাতে গিয়ে বিদেশী ক্যাপ্টেন ও নাবিকদের হয়রানী করে মদ, সিগারেট, ডলার ও প্রসাধনীসহ বিভিন্ন মালামাল হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। এ সকল কর্মকর্তাদের বন্দরে জাহাজ এসে ভিড়ার পর বন্দর ত্যাগের আগে মুহুর্ত পর্যন্ত জাহাজেই দায়িত্বরত থাকার বিধান থাকলেও তারা উপঢৌকনাদি নিয়ে একবারেই চলে আসেন। ফলে জাহাজগুলো হয়ে পড়ে অরক্ষিত। সেই সুযোগেই চোরাকারবারীরা বিদেশী জাহাজগুলো থেকে বিভিন্ন পণ্য পাচার করে থাকেন।
কাস্টমসের এ রামেজ টিমের বিষয়ে মোংলা কাস্টমস হাউডের রাজস্ব কর্মকর্তা ও রামেজ টিম প্রধান মোঃ নাজমুল বলেন, আমাদের লোকবলের সমস্যা রয়েছে, যার কারণে এই সময়্যাগুলো দেখা দিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে তৎপর হবো, ভবিষ্যতে আর এ সমস্যা থাকবেনা।
মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ হোসেন আহমেদ বলেন, এ সংক্রাস্ত বিষয়ে মোংলা বন্দর কাস্টমস ভেন্ডর এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চিঠি পেয়েছি। বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া বন্দরে অবস্থানরত বিভিন্ন জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহণের জন্য বন্দরের ফেয়ারওয়ে বয়া, হিরণ পয়েন্ট, হাড়বাড়িয়া ও সুন্দরীকোঠা এলাকায় কার্গো জাহাজের করে ষ্টিভিডরিং কোম্পানীগুলো তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাঠিয়ে থাকেন। সেই সকল কার্গোর স্টাফদের ম্যানেজ করে চোরাকারবারীরা জাহাজ গিয়ে এবং তাতে পণ্য চোরাচালান করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ফেরিওয়ালা নামের আড়ালে চক্রটি বিদেশী জাহাজ থেকে পণ্য চোরাচালান করে আসছেন নিয়মিতভাবেই। শুধু মোংলাতেই এমন চক্রের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০/২২ জন। এদের মধ্যে রয়েছে চোরাচালান চক্রের গডফাদার অর্থাৎ আশ্রয়দাতা, অর্থদাতা ও প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করা ব্যক্তিরাও। এরমধ্যে গডফাদার রয়েছেন সরকার দলের পাতি নেতারাও। যারা বড় নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে ও নাম ভাঙ্গিয়ে এ চোরাকারবারী চালিয়ে যাচ্ছেন। মোংলা পৌর শহরের সিঙ্গাপুর মার্কেট, রিজেকশন গলি, শহরতলীর কানাইনগর-বাইদ্যাপাড়া ও জয়মনি এলাকার সংঘবদ্ধ এ চোরাকারীবারীদের ২২/২২ জন সদস্য দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বন্দরের পশুর নদী। এছাড়া খুলনার দাকোপ উপজেলার লাউডোব, বাজুয়া, বানীশান্তা-কাটাখালীতেও রয়েছে আরো একটি চোরাচালানী সিন্ডিকেট চক্র। মোংলা ও দাকোপ এই দুই উপজেলার মাঝেই বন্দরের পশুর নদী। তাই দুই উপজেলাতেই গড়ে উঠেছে বন্দর কেন্দ্রীক চোরাচালান সিন্ডিকেট চক্র। এ চক্র মুলত বিদেশী জাহাজ থেকে ডিজেল, মোবিল, মুরিং রোপ, ওয়ায়ের রোপ, লোহা, তামা, বিদেশী মদ, সিগারেট ও রংসহ নানা ধরণের মুল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ মালামাল পাচার করে আসছেন। বিশেষ করে গ্যাস, ভোজ্যতেল ও গাড়ীর জাহাজগুলো থেকেই ডিজেল বেশি পাচার হয়ে থাকে। বিদেশী জাহাজের হ্যাজ ভেঙ্গেও মালামাল লুটে থাকেন এ চক্রটি।
গত রবিবার ও সোমবার মোংলা বন্দরের পশুর নদীর কানাইনগর এলাকা থেকে চোরাচালানকারী চক্রের দুইটি ট্রলার ও এক পাচারকারীর সদস্যসহ প্রায় ৬৮ লাখ টাকা মূল্যের ৪৮ পিচ এসএস পাইপ জব্দ করে কোস্ট গার্ড। এছাড়া এর আগে পুলিশও চোরাকারবারীদের পাচারকৃত বিদেশী জাহাজের বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করে কাইনমারী-কানাইনগর এলাকা হতে। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিদেশী জাহাজ থেকে পাচারকৃত মালামালের আশিংক পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হলেও মুলত আটক হন না পাচারকারীরা। ফলে ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যান এ চক্রের সদস্যরা।
মোংলা বন্দর কাস্টমস ভেন্ডর এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আ: মালেক বলেন, আমরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত ভেন্ডর লাইসেন্স নিয়েই বিদেশী জাহাজে ব্যবসা করে থাকি। কিন্তু এ ব্যবসা কেন্দ্রীক একটি চোরাকারবারী সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে, যাদের কোন লাইসেন্স কিংবা বৈধ কাগজপত্র নেই। তারা দিনে ও রাতের আধারে জাহাজ থেকে মালামাল পাচার করে আসছে, যার ফলে আমরা প্রকতৃ ব্যবসায়ীর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি এবং কাস্টমস কতর্ৃপক্ষও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মোংলা বন্দর শিপ চ্যালেন্ডলার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এইচ এম দুলাল বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ শীপ চ্যান্ডেলার্স ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভেন্ডর লাইসেন্স দিয়েছেন ব্যবসায়ীদেরকে। সে সকল লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা কাজ করতে পারছেন না। কারণ অবৈধ ও চোরাইভাবে ছোট ছোট নৌকা জাহাজের গায়ে/পাশে গিয়ে মালামাল বিনিময়ের আড়ালে চোরাচালান করে আসছেন। এটা বন্ধ না হওয়ায় আমরা লাইসেন্সধারী প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কাজ পাচ্ছিনা। এ কারবারটি বহুদিন ধরে চলছে। প্রশাসন বিষয়টিতে নজর দিচ্ছেনা, এটা নিয়ে প্রশাসনের জরুরী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
এদিকে মোংলা বন্দরে আমদানীকৃত পণ্য পশুর নদী থেকে খোয়া যাওয়ার ঘটনার বিষয়টি গত ১লা নভেম্বর দুপুরে বাগেরহাটের রামপালে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উল্লেখ করে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশকে এটি দেখার জন্য নির্দেশনা দেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উর্ধতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো: আয়উব আলী বলেন, এ সব বন্ধে কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, পুলিশ ও কাস্টমসকে চিঠি দেয়া হবে এবং তাদের সাথে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, যারা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী তারা ছাড়া যাতে অন্য কেউ বিদেশী জাহাজে উঠতে না পারেন সেজন্য তাদের ব্যবহৃত নৌযানে রং দিয়ে মাকিং ও পরিচয়পত্র বহন বাধ্যতামুলক করা হবে।
এ ব্যাপারে মোংলা কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সদর দপ্তরের উর্ধতন এক কর্মকতার্ বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি এবং সেই অনুযায়ী কাজ করছি। চোরাচালনরোধসহ সকল ধরণের অপরাধমুলক কর্মকান্ড বন্ধে কোস্ট গার্ড সার্বক্ষনিকই তৎপর রয়েছে। আগে যেমন তৎপর ছিল এখনও আছে এবং ভবিষ্যৎতের জন্যেও আমাদের সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।
চোরাচালান রোধে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা কাস্টমস হাউস, কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সদর দপ্তর, ডিআইজ (খুলনা), বাগেরহাট পুলিশ সুপার, বাগেরহাট পিবিআই ও নৌ পুলিশের উর্ধতন কর্মকতার্ বরাবর মোংলা বন্দর কাস্টমস ভেন্ডর এ্যাসোসিয়েশনসহ বন্দরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের দেয়া লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, মোংলা বন্দরে আগত বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে সার্বক্ষণিক কাস্টমসের রামেজ টিম থাকার কথা থাকলেও মুলত তারা না থাকার কারণেই চোরাকারবারীরা জাহাজ থেকে বিভিন্ন মুল্যবান মালামাল পাচারের সুযোগ পাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে কাস্টমসের রামেজ কর্মকর্তারা জাহাজ আসার পর তাতে গিয়ে বিদেশী ক্যাপ্টেন ও নাবিকদের হয়রানী করে মদ, সিগারেট, ডলার ও প্রসাধনীসহ বিভিন্ন মালামাল হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। এ সকল কর্মকর্তাদের বন্দরে জাহাজ এসে ভিড়ার পর বন্দর ত্যাগের আগে মুহুর্ত পর্যন্ত জাহাজেই দায়িত্বরত থাকার বিধান থাকলেও তারা উপঢৌকনাদি নিয়ে একবারেই চলে আসেন। ফলে জাহাজগুলো হয়ে পড়ে অরক্ষিত। সেই সুযোগেই চোরাকারবারীরা বিদেশী জাহাজগুলো থেকে বিভিন্ন পণ্য পাচার করে থাকেন।
কাস্টমসের এ রামেজ টিমের বিষয়ে মোংলা কাস্টমস হাউডের রাজস্ব কর্মকর্তা ও রামেজ টিম প্রধান মোঃ নাজমুল বলেন, আমাদের লোকবলের সমস্যা রয়েছে, যার কারণে এই সময়্যাগুলো দেখা দিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে তৎপর হবো, ভবিষ্যতে আর এ সমস্যা থাকবেনা।
মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ হোসেন আহমেদ বলেন, এ সংক্রাস্ত বিষয়ে মোংলা বন্দর কাস্টমস ভেন্ডর এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চিঠি পেয়েছি। বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া বন্দরে অবস্থানরত বিভিন্ন জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহণের জন্য বন্দরের ফেয়ারওয়ে বয়া, হিরণ পয়েন্ট, হাড়বাড়িয়া ও সুন্দরীকোঠা এলাকায় কার্গো জাহাজের করে ষ্টিভিডরিং কোম্পানীগুলো তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাঠিয়ে থাকেন। সেই সকল কার্গোর স্টাফদের ম্যানেজ করে চোরাকারবারীরা জাহাজ গিয়ে এবং তাতে পণ্য চোরাচালান করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ফেরিওয়ালা নামের আড়ালে চক্রটি বিদেশী জাহাজ থেকে পণ্য চোরাচালান করে আসছেন নিয়মিতভাবেই। শুধু মোংলাতেই এমন চক্রের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০/২২ জন। এদের মধ্যে রয়েছে চোরাচালান চক্রের গডফাদার অর্থাৎ আশ্রয়দাতা, অর্থদাতা ও প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করা ব্যক্তিরাও। এরমধ্যে গডফাদার রয়েছেন সরকার দলের পাতি নেতারাও। যারা বড় নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে ও নাম ভাঙ্গিয়ে এ চোরাকারবারী চালিয়ে যাচ্ছেন। মোংলা পৌর শহরের সিঙ্গাপুর মার্কেট, রিজেকশন গলি, শহরতলীর কানাইনগর-বাইদ্যাপাড়া ও জয়মনি এলাকার সংঘবদ্ধ এ চোরাকারীবারীদের ২২/২২ জন সদস্য দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বন্দরের পশুর নদী। এছাড়া খুলনার দাকোপ উপজেলার লাউডোব, বাজুয়া, বানীশান্তা-কাটাখালীতেও রয়েছে আরো একটি চোরাচালানী সিন্ডিকেট চক্র। মোংলা ও দাকোপ এই দুই উপজেলার মাঝেই বন্দরের পশুর নদী। তাই দুই উপজেলাতেই গড়ে উঠেছে বন্দর কেন্দ্রীক চোরাচালান সিন্ডিকেট চক্র। এ চক্র মুলত বিদেশী জাহাজ থেকে ডিজেল, মোবিল, মুরিং রোপ, ওয়ায়ের রোপ, লোহা, তামা, বিদেশী মদ, সিগারেট ও রংসহ নানা ধরণের মুল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ মালামাল পাচার করে আসছেন। বিশেষ করে গ্যাস, ভোজ্যতেল ও গাড়ীর জাহাজগুলো থেকেই ডিজেল বেশি পাচার হয়ে থাকে। বিদেশী জাহাজের হ্যাজ ভেঙ্গেও মালামাল লুটে থাকেন এ চক্রটি।
গত রবিবার ও সোমবার মোংলা বন্দরের পশুর নদীর কানাইনগর এলাকা থেকে চোরাচালানকারী চক্রের দুইটি ট্রলার ও এক পাচারকারীর সদস্যসহ প্রায় ৬৮ লাখ টাকা মূল্যের ৪৮ পিচ এসএস পাইপ জব্দ করে কোস্ট গার্ড। এছাড়া এর আগে পুলিশও চোরাকারবারীদের পাচারকৃত বিদেশী জাহাজের বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করে কাইনমারী-কানাইনগর এলাকা হতে। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিদেশী জাহাজ থেকে পাচারকৃত মালামালের আশিংক পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হলেও মুলত আটক হন না পাচারকারীরা। ফলে ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যান এ চক্রের সদস্যরা।
মোংলা বন্দর কাস্টমস ভেন্ডর এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আ: মালেক বলেন, আমরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত ভেন্ডর লাইসেন্স নিয়েই বিদেশী জাহাজে ব্যবসা করে থাকি। কিন্তু এ ব্যবসা কেন্দ্রীক একটি চোরাকারবারী সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে, যাদের কোন লাইসেন্স কিংবা বৈধ কাগজপত্র নেই। তারা দিনে ও রাতের আধারে জাহাজ থেকে মালামাল পাচার করে আসছে, যার ফলে আমরা প্রকতৃ ব্যবসায়ীর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি এবং কাস্টমস কতর্ৃপক্ষও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মোংলা বন্দর শিপ চ্যালেন্ডলার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এইচ এম দুলাল বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ শীপ চ্যান্ডেলার্স ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভেন্ডর লাইসেন্স দিয়েছেন ব্যবসায়ীদেরকে। সে সকল লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা কাজ করতে পারছেন না। কারণ অবৈধ ও চোরাইভাবে ছোট ছোট নৌকা জাহাজের গায়ে/পাশে গিয়ে মালামাল বিনিময়ের আড়ালে চোরাচালান করে আসছেন। এটা বন্ধ না হওয়ায় আমরা লাইসেন্সধারী প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কাজ পাচ্ছিনা। এ কারবারটি বহুদিন ধরে চলছে। প্রশাসন বিষয়টিতে নজর দিচ্ছেনা, এটা নিয়ে প্রশাসনের জরুরী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
এদিকে মোংলা বন্দরে আমদানীকৃত পণ্য পশুর নদী থেকে খোয়া যাওয়ার ঘটনার বিষয়টি গত ১লা নভেম্বর দুপুরে বাগেরহাটের রামপালে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উল্লেখ করে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশকে এটি দেখার জন্য নির্দেশনা দেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উর্ধতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো: আয়উব আলী বলেন, এ সব বন্ধে কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, পুলিশ ও কাস্টমসকে চিঠি দেয়া হবে এবং তাদের সাথে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, যারা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী তারা ছাড়া যাতে অন্য কেউ বিদেশী জাহাজে উঠতে না পারেন সেজন্য তাদের ব্যবহৃত নৌযানে রং দিয়ে মাকিং ও পরিচয়পত্র বহন বাধ্যতামুলক করা হবে।
এ ব্যাপারে মোংলা কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সদর দপ্তরের উর্ধতন এক কর্মকতার্ বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি এবং সেই অনুযায়ী কাজ করছি। চোরাচালনরোধসহ সকল ধরণের অপরাধমুলক কর্মকান্ড বন্ধে কোস্ট গার্ড সার্বক্ষনিকই তৎপর রয়েছে। আগে যেমন তৎপর ছিল এখনও আছে এবং ভবিষ্যৎতের জন্যেও আমাদের সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।