অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে সীমান্তবর্তী একটি জেলায় প্রতিদিন অন্তত ৩-৫ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। তদন্ত সংস্থাটি জানিয়েছে, জুয়ার টাকা লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা নিতো চক্রটি। এসব অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হতো বলেও ধারণা তাদের।
রবিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
ডিআইজি বলেন, ‘একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ওয়ানএক্সবেটবিডি ডটকম নামের একটি বেটিং সাইটের সন্ধান পাই। সাইটটি রাশিয়া থেকে পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে এর এজেন্ট রয়েছে। ৯ এজেন্টকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৩ নভেম্বর দেশের সীমান্তবর্তী মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।’
গ্রেফতারকৃতরা হলো—মেহেরপুরের স্বপন মাহমুদ (২৭), নাজমুল হক (২১), আসলাম উদ্দিন (৩৫), মুরশিদ লিপু (২৫), চুয়াডাঙ্গার শিশির মোল্লা (২১) ও কক্সবাজারের মাহফুজুর রহমান নবাব, তার স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলি (২৪), মো. সাদিক এবং মাসুদ রানা (২০)।
এদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান নবাব মেহেরপুর জেলার মূল নিয়ন্ত্রক। তার অধীনে অন্তত ১২-১৩ জন এজেন্ট রয়েছে।
সিআইডি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বেটিং সাইটের একজন এজেন্টের সিমে দিনে প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ লাখ টাকা এবং অপর একটি সিমে ১০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছি। এ জেলায় এমন ৫০ জন এজেন্ট আছে। প্রতিদিনই ৩ থেকে ৫ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হচ্ছিল সেখানে। সারাদেশের চিত্র এখনও পাইনি।’
দিনে একটি বেটিং সাইটে এক থেকে দেড় লাখ ব্যক্তি জুয়ায় অংশ নিচ্ছে বলেও জানায় সিআইডি। যাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
চক্রটি বিভিন্ন টুর্নামেন্ট টার্গেট করে জুয়ার আয়োজন করে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বেটিং সাইটটিতে অ্যাকাউন্ট খুললে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি হয়। তাতে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে টাকা লোড করতে হয়। বেটিং সাইটে দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বরে টাকা পাঠানোর পর তা ই-ওয়ালেটে যুক্ত হয়। ন্যূনতম এক হাজার টাকা পাঠালে অ্যাকাউন্টধারীকে পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। সেটা ব্যবহার করেই শুরু হয় জুয়া।’
কামরুল আহসান বলেন, ‘জুয়ায় জড়িতরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিজনেস সিম পেয়ে যাচ্ছে। এমনকি এসব সিম ভাড়াও নিতো ওরা।’
বিজনেস বা এজেন্ট অ্যাকাউন্টে লেনদেনে এখনও কোনও লিমিট নেই। এই সুযোগই নিচ্ছে চক্রটি। এ কারণে অবৈধ এসব কাজ বন্ধ করতে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও কাজ করছে সিআইডি।
গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, গোপন লেনদেনে তারা ম্যানেজমেন্ট ডক আইও নামের ওয়েবসাইট, টেলিগ্রাম ও রেড্ডি নামক কিছু অ্যাপস ব্যবহার করতো। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও অর্থ লেনদেনের তথ্য আদান-প্রদানে অ্যাপসগুলো ব্যবহার করতো তারা।
এখন পর্যন্ত বেটিং সাইটটিতে ৬০-৭০ জন এজেন্টের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি। তাদের মাধ্যমে অর্থপাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কিছু অ্যাকাউন্ট নম্বর পেয়েছি। সেসব অ্যাকাউন্টে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করার পর আবার তোলা হয়েছে। এ টাকা তারা পাচার করছে কোনোভাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম, বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল মাসুদ এবং অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।