বাগেরহাটের চন্দ্র মহল ইকোপার্ক থেকে ১৬ প্রজাতির ৪৩টি বন্য প্রাণি উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ এবং র্যাব-৬ যৌথ অভিযান চালিয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলার রনজিতপুর এলাকায় অবস্থিত চন্দ্রমহল ইকোপার্ক থেকে এসব বন্য প্রাণি উদ্ধার করে। আইন বহির্ভূতভাবে বন্য প্রাণি সংরক্ষনের অপরাধে চন্দ্রমহল ইকোপাকের্র ব্যবস্থাপক মোহাম্মাদ আলী চাকলাদারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
এসময়, র্যাব-৬ কর্মকর্তা পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার নূরই আলম সিদ্দিকি, বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ খুলনার, বন্যপ্রানী ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষন কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য, পরিদর্শক রাজু আহমেদসহ র্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জব্দকৃত বন্য প্রাণির মধ্যে একটি কুমির, ২টি চিত্রা হরিণ, ১টি হনুমান, ৫ টি বানর, ১টি ময়ুর, ২টি উঠ পাখি, অস্ট্রালিয়ান ঘুঘু ৫টি, ২টি কচ্ছপ, বক ৭টি, ২টি মাছমুতাল পাখি রয়েছে। এছাড়াও ৬টি হরিণের শিং, ৬টি চামড়া, একটি ভাল্লুকের চামড়া, একটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া ও একটি তিমির কঙ্কাল জব্দ করেছে র্যাব-৬ এর সদস্যরা। জব্দকৃত এসব প্রাণি বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তীতে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন র্যাব ৬ এর কর্মকর্তা পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, চন্দ্রমহল ইকো পাকের্র মালিক অবৈধভাবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে এসব প্রাণি লালন পালন করে আসছিলেন। যা বন্য প্রাণি সংরক্ষন আইনের পরিপন্থী। এজন্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চন্দ্রমহল ইকো পার্কে অভিযান চালিয়ে ১৬ প্রজাতির ৪৩টি প্রাণি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব প্রাণি পরবর্তীতে অবমুক্ত করা হবে। ভবিষ্যতে বন্য প্রাণি রক্ষায় র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক সহকারি কমিশনার নূর ই আলম সিদ্দিকি বলেন, অবৈধ ভাবে বন্য প্রাণি রাখার অপরাধে বন্য প্রাণি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর ৩৭(২), ৪০, ৩৪ (খ) এবং ২৪ ধারা মোতাবেক চন্দ্রমহল ইকো পাকের্র ব্যবস্থাপক মোহাম্মাদ আলী চাকলাদারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ব্যবস্থাপক মোহাম্মাদ আলী চাকলাদার জরিমানার টাকা নগদে পরিশোধ করায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ খুলনার, বন্যপ্রানী ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষন কর্মকর্তা তন্ময় আচাযর্য বলেণ, বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ সব সময় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কেউ কোন বন্য প্রাণি অবৈধভাবে তার সংরক্ষনে রাখলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করি। এর অংশ হিসেবে চন্দ্রমহল ইকো পার্কে র্যাবের সহায়তায় অভিযান চালানো হয়। এখান থেকে বন্য প্রাণিসংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর তফসিলভুক্ত ৪৩টি প্রাণি উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের এই ধরণের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
বছর দশেক আগে বাগেরহাট সদর উপজেলার রনজিতপুর এলাকায় বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী আমানুল হুদা সেলিম চন্দ্রমহল ইকো পার্ক তৈরি করেন। এখানে নির্ধারিত ফি দিয়ে দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারেন। দর্শনার্থীদের আকর্ষণ রাখতে ব্যবসায়ী সেলিম হুদা এখানে বিভিন্ন বন্য প্রাণি খাঁচায় আটকে লালন-পালন করেন।