২৬ তম জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন (কপ২৬) প্যারিস জলবায়ূ সম্মেলনের আইনগত বাধ্য করার রুল বুক বলে অভিহিত করেছেন করেছেন খুলনার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, কাবর্ণ নি:সরণ, জলবায়ূ ক্ষতিপূরণে তহবিল গঠন, ক্ষতিপূরণ প্রদান, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বন্ধে প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। তবে জলবায়ূ ক্ষতি মোকাবেলায় অভিযোজনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এ সম্মেলনের মাইল ফলক।
সোমবার সকালে খুলনা নগর ভবনে COP26 এর পর্যালোচনা ও স্থানীয় পর্যায়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিরূপণ বিষয়ে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী খুলনার প্রতিনিধিরা এ মন্তব্য করেন। খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাওসেডের নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফীন কেসিসি’র প্যানেল মেয়র-২ মোঃ আলী আকবর টিপু, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ড. মোস্তফা সারোয়ারসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও অ্যাওসেড যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
সভাপতির বক্তৃতায় সিটি মেয়র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশে^র সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ১০টি শহরের একটি হলো খুলনা। যেসকল দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বেশি দায়ি তাদেরকে এ বিষয়ক অভিযোজন ও প্রশমন প্রক্রিয়ার অর্থায়নে অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সদ্য সমাপ্ত স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে সম্মেলনে অন্যতম পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে এ বছরই প্রথম অ্যাওসেড নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, জলবায়ু গবেষক এবং বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। সম্মেলনের পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা দুটি যৌথ ইভেন্টে অংশ নেয়। Climate Displacement: Towards a Pragmatic Global Response শীর্ষক সাইড ইভেন্টটি যৌথভাবে আয়োজন করে Norwegian Refugee Council, AOSED, Arab Network for Environment and Development, Ges COAST Trust. এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি। এতে বক্তারা বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তিত পরিস্থিতির ফলে সৃষ্ট সমস্যাসমূহ বিশেষ করে জলবায়ু উদ্বাস্ত সংকট ও Loss and Damage ইস্যু তুলে ধরে উন্নত দেশগুলির সহায়তা কামনা করা হয়।
মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে কপ২৬ সম্মেলনের অন্যতম আলোচিত ইস্যু ছিল শিল্প বিপ্লব পূর্ব সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি যেন না বাড়ে, সেজন্য শীর্ষ গ্যাস উদগীরণকারী দেশগুলোর (চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত) কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আশা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি মিলেছে সেখানে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
অপরদিকে ১০৪ টি দেশ বন উজার রোধ করা ও বনভূমি সংরক্ষণ করার বিষয়ে ঐক্যমত হয়ে স্বাক্ষর করেছে যার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ হলো চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য অর্জনে একসাথে কাজ করবে।
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য সহায়তা হিসেবে নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছিল যা পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পূরণ হয়নি। এবারের সম্মেলন থেকে ১শ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের সময়সীমা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে এই তহবিল বিতরণে যেমন অনিয়ম ছিল তেমনি বিতরণ হওয়া অর্থ ডাবল কাউন্টিং করা হতো, এখন থেকে ৫০% হারে মিটিগেশন ও অ্যাডাপটেশনে বিতরণ করান হবে।
সম্মেলনের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে তারা বলেন, এবারের সম্মেলনে ‘লস অ্যন্ড ড্যামেজ ফান্ড’ সৃষ্টি করে ক্ষতিপূরণ পেতে বিপন্ন দেশগুলোর একটি প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু এই তহবিলের প্রতিশ্রুতি না মেলায় ব্যপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে ২০৫০ সালের পর কয়লা ভিত্তিক শিল্প ‘Phase Out” হবে এমন ভাষা পরিবর্তন করে ”Phase dowon” ব্যবহার করা হয়েছে। এর পেছনে ছিল ভারত ও চীনের তিব্র বিরোধীতা। ভারত ২০৭০ সাল নাগাদ কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসার কথা বলেছে।