বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের এই চরম সংকটময় সময়ে আমি অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ ব্যয় না করে তা সার্বজনীন টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ব্যয় করার আহ্বান জানাই। আসুন আমরা সার্বজনীন শান্তির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ি।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত ওয়ার্ল্ড পিস কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ একুশ বছরের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করি। একই বছর ১২ নভেম্বর দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিরসন করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি। জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করি। ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ি উপজাতিদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়ে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করি। ১৯৯৭ সালে আমরাই প্রথম জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতি বিকাশের কর্মসূচি গ্রহণের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করি এবং এটি ১৯৯৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গৃহীত হয়। সেই অনুযায়ী জাতিসংঘ ২০০০ সালকে শান্তির সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক বছর এবং ২০০১ থেকে ২০১০-কে শান্তির সংস্কৃতির অহিংস দশক হিসেবে ঘোষণা করে।
তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মীমাংসা করি। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছি। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে নীবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। আমরা এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমরা বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছি। দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভীতের ওপর প্রতিষ্ঠিত আমরা করেছি। আমরা স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত এবং সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছি এবং এর মধ্য দিয়ে শান্তির মূল্য এবং সমগ্র মানবজাতির গভীরতম আকাঙ্ক্ষাগুলো অনুধাবন করেছি। বরাবরের মতো ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্যা দাবির প্রতি আমাদের অবিচল সমর্থন থাকবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি। ফলে ওই অঞ্চলে একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।
সরকার প্রধান বলেন, গত দুই বছর ধরে করোনা ভাইরাস মহামারি সারা বিশ্বকে এক সংকটের মুখোমুখি করেছে। এই সংকট প্রমাণ করেছে যে আমরা কেউই আলাদা নই। শান্তিপূর্ণভাবে এই পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটা জবাবদিহিমূলক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তির আদর্শকে পুরোপুরি ধারণ করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত রয়েছে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামাজিক বৈষম্য রোধে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কটও উঠে এসেছে।
সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোহ চোক তং বলেন, বাংলাদেশকে প্রথম দিকে স্বীকৃতিদানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাপুর।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে দুই দেশের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ শান্তির পথিকৃৎ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তির সংস্কৃতির সূচনা করেছেন। আগামীতে আমরা সারা বিশ্বেই শান্তির বার্তা দিতে চাই।
শনিবার থেকে ঢাকায় শুরু হয় দুই দিনব্যাপী বিশ্ব শান্তি সম্মেলন। ওই হোটেলে আয়োজিত এ সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৯ জন প্রতিনিধি সশরীরে যোগ দেন। আর ৪০ জন প্রতিনিধি ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন। রোববার এ সম্মেলন সম্পন্ন হয়। শনিবার সম্মেলনের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।